পদ্মায় পানির স্তর কম থাকার কারণে পন্টুন নিচু হয়ে গেছে। ফলে ঘাট থেকে অ্যাপ্রোচ সড়ক উঁচু হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায় রয়েছে ধীরগতি। সেই সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। যে কারণে বেশকিছু দিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানজট লেগেই আছে।
পদ্মা পারাপার হতে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা এবং যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে চালক ও যাত্রীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চার কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহন ও ট্রাকের সারি রয়েছে। এ ছাড়াও ঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরো দুই কিলোমিটার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের সারি। প্রতিটা যাত্রীবাহী পরিবহনকে ফেরিতে উঠতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। আর পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত।
এ দিকে পদ্মা নদীর মাঝ এলাকায় পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌ চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। নৌ চ্যানেল ঠিক করতে ড্রেজিং করে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। ফলে ফেরিগুলোকে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করায় সময় বেশি লাগছে।
যশোর থেকে আসা ঢাকাগামী ট্রাকচালক মোসলেম উদ্দিন পদ্মা পারের জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে দুইদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘ঘাটে কোনো শৃঙ্খলা নেই। শৃঙ্খলা থাকলে এই জ্যাম থাকে না। আজ সারাদিনের মধ্যে ভাতের মুখ দেখি নাই। পরশু দিন গোসল করেছি, এরপর আর গোসল করতে পারি নাই। আমাদের কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই।’
ঝিনাইদাহ থেকে আসা ঢাকাগামী আরেক ট্রাকচালক রমজান আলীও পদ্মা পারের জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে দুইদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘১৮ থেকে ২০টি ফেরি চলাচল করলে ঘাটে জ্যাম থাকে না। জ্যাম বাঁধানো ম্যানেজমেন্টের একটা সিস্টেম। এটা করলে তাদের লাভ থাকে। সে জন্য হয়তো জ্যাম লাগায়। কিন্তু এই জ্যামের কারণে আমাদের ঠিকমতো নাওয়া নাই, খাওয়া নাই, ঘুম নাই। দুইদিন ধরে রাস্তায় আছি। গাড়ি চালিয়ে সপ্তাহে পাই দুই হাজার টাকা। সেটা পথেই শেষ।’
শামীম পরিবহনের যাত্রী রুপা ইসলাম বলেন, ‘এই রুটে খুবই ভোগান্তি। বেলা ১১টায় ঘাটে এসেছি। এখন দুপুর ২টা বাজে। কিন্তু এখনো ফেরিতে উঠতে পারি নাই। কখন উঠব সেটাও জানি না।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) মানিকগঞ্জের আরিচা বন্দরের উপ-পরিচালক মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, বর্তমানে ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। আগের থেকে বাস, ট্রাক, ছোট গাড়ির দ্বিগুণ চাপ বেড়েছে। আর নাব্যতা সংকট মাঝ নদীতে নয়, ঘাট এলাকায় রয়েছে। পানির স্তর নিচু হয়ে যাওয়ায় ফেরিতে লোড-আনলোড হতে দেরি হচ্ছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
ঘাট এলাকায় ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃত জ্যাম সৃষ্টির বিষয়টি অস্বীকার করে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন জানান, এই রুটে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ রয়েছে। এ কারণে সার্বক্ষণিক ২০টি ফেরি চলাচল করছে। যানজট নিরসনে ঘাট এলাকায় কাজ করছে দায়িত্বশীলরা।