logo
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০২২ ০৯:২৭
জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরির চাষ
পলাশ প্রধান, গাজীপুর

জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরির চাষ

কাপাসিয়া কুড়িয়াদী গ্রামে বিদ্যুৎতের স্ট্রবেরির

গাজীপুরের কাপাসিয়া সিংহশ্রী ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম কুড়িয়াদী। এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে শীতকালীন ফসলের চাষ করেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে সেই চরগুলোয় চাষে ভিন্নতা আনছেন কৃষকরা।

শীতকালীন সবজি ছেড়ে শীতলক্ষ্যা তীরে স্ট্রবেরির চাষ করছেন গুটিকয়েক কৃষক। বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিনিয়ত কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরির চাষ। এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা।

শুধু কুড়িয়াদী গ্রাম নয়, গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার শীতলক্ষ্যার তীরে চাষ হচ্ছে স্ট্রবেরির। জেগে ওঠা চরে লাল টকটকে রঙের সুগন্ধিযুক্ত টক ও মিষ্টি স্বাদের বিদেশি স্ট্রবেরির ফলনও হয়েছে ভালো।

শীতপ্রধান দেশে ফল স্ট্রবেরি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে, সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। অনেকে শখের বসে বাসাবাড়ির টবে বা ছাদকৃষিতে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু হচ্ছে।

কৃষিকাজে সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় স্ট্রবেরি। এ ফলের রস জ্যাম, আইসক্রিম, মিল্ক শেকসহ শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

কুড়িয়াদী গ্রামের কৃষক তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ। চরে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন তিনি। কৃষিকাজে ভিন্নতা আনতে চলতি মৌসুমে পাশের শ্রীপুর উপজেলার মৌমিতা ফ্লাওয়ার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেনের পরামর্শে ক্ষেতে স্ট্রবেরির চারা বুনেছেন তিনি। দেলোয়ারের কাছ থেকে এক হাজার স্ট্রবেরির চারা কিনে ফলটির চাষ করছেন বিদ্যুৎ।

তিনি বলেন, ‘বর্র্ষায় জমিগুলো পানিতে ডুবে যায়। বর্ষা শেষে নদীর পানি নেমে যায়। এতে পলিমাটি জমে কৃষিজমিগুলো বেশ উর্বর হয়ে থাকে। এতে যে কোনো ফসলের চাষ করা হলেই সফল হওয়া যায়।’

‘দেলোয়ারের কাছ থেকে প্রতি পিস ৩০ টাকা করে এক হাজার স্ট্রবেরির চারা কিনেছি। কছেশ মাস পরিচর্যা করার পর এখন ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি স্ট্রবেরি ৭শ থেকে ৮শ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি’, যোগ করেন এই স্ট্রবেরি চাষি।

বিদ্যুতের পাশাপাশি নদীর চরে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি রোপণ করেছেন ৭ হাজার স্ট্রবেরির চারা। এ ছাড়াও হুমায়ুন কবির জাপানি নামের এক যুবক রোপণ করেছেন তেরো হাজার স্ট্রবেরির চারা।

হুমায়ুন কবির জাপানি বলেন, ‘গত মৌসুমে পেঁপের বাগান করেছিলাম। শিলাবৃষ্টিতে অনেক লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। তাই এবার আমরা কয়েকজন মিলে ঝুঁকি নিয়েছি স্ট্রবেরি চাষের। নদীতীরের পতিত চরে আমরা স্ট্রবেরি চাষে ভালো ফলন পেয়েছি। এখন আমাদের দেখাদেখি অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। লাভজনক চাষ বিধায় নদীতীরে সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে আগামীতে।’

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মাহবুব আলম জানান, স্ট্রবেরিতে উচ্চমাত্রায় পুষ্টিমান বিদ্যমান। এই ফল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সহায়তা করে। গাজীপুরে বিক্ষিপ্তভাবে স্ট্রবেরির চাষ হলেও তারা এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘জেলার মোট কত জমিতে স্ট্রবেরির চাষ হয়েছে তার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। অনেকে শখের বশে বাসাবাড়িতে স্ট্রবেরির চাষ করলেও এখন কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। এ চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’