স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসেও দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় হয়রানির মুখোমুখি। উপকূলীয় অঞ্চলে এরূপ হয়রানির শিকার শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষ। হয়রানির পাশাপাশি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত অর্ধেকের বেশি মানুষ। হয়রানি থেমে নেই রাজধানী ঢাকাতেও। খোদ ঢাকা সিটি করপোরেশনের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ হয়রানির শিকার; সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ৪০ ভাগ মানুষ। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ে কাজ করা ‘জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি’র ‘স্বাধীনতাপরবর্তী স্বাস্থ্য খাত ও বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
‘জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি’র গবেষণার তথ্যমতে, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ভঙ্গুর রাষ্ট্র থেকে বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাত পূর্বের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আধুনিক হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাত। বর্তমান সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে জনগণের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। তবে এতকিছুর পরও নানা সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে।
‘জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি’ কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণাপত্রমতে, স্বাধীনতাপরবর্তী ৫১ বছরে দেশের প্রায় ৯২ ভাগ মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে হয়রানির মুখোমুখি হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষ হয়রানির মুখোমুখি। পাশাপাশি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ। ঢাকা সিটি করপোরেশনের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ হয়রানির শিকার এবং সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ৪০ ভাগ মানুষ। রাজশাহীতে বিভাগে ৬২ ভাগ, রংপুরে ৭৭, বরিশালে ৮০, খুলনায় ৮৩, ময়মনসিংহে ৫৫, সিলেটে ৪৩ ভাগ মানুষ হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে।
গবেষণাপত্রে সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- সব জনপ্রতিনিধিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে এমন আইন বাস্তবায়ন করা, চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা এবং স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য ডাক্তার ও স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ব্যক্তির মানসিক কাউন্সেলিং ব্যবস্থা জোরদার করা, শূন্যপদে দ্রুত ডাক্তার নিয়োগ করা, সব ডাক্তারের সমন্বয়ে চিকিৎসা বোর্ড গঠন করা।
স্বাধীনতার সুদীর্ঘ পঞ্চাশটি বছর অতিক্রম করে একান্ন বছরে পদার্পণ করেছে দেশ। শোষণ-বঞ্চনার শিকল থেকে মুক্তি লাভের অর্ধশত বছর পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের এহেন নাজুক চিত্র অত্যন্ত দুঃখজনক। গবেষণাপত্রে মোটা দাগে বলা হয়েছে, দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ এ খাতের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী অসাধু চক্র। অস্বীকার করার উপায় নেই, স্বাস্থ্যসেবা খাতে গজিয়ে ওঠা এরূপ অসৎ ব্যবসায়ী কিংবা দালালশ্রেণি তথা সিন্ডিকেটের অপকর্মের খবর মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্যমী তৎপরতায় প্রায়ই অসাধু চক্র আটক হওয়ার সংবাদ দৃষ্টিগোচর হয়।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশব্যাপী উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-জনকল্যাণের জয়-জয়কার সর্বত্র। দেশের এগিয়ে যাওয়ার এরূপ সোনালি মুহূর্তে স্বাস্থ্যসেবা খাতের পিছিয়ে পড়া কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। এ নিয়ে সত্বর ভাবতে হবে। এ খাতের অসাধু ব্যবসায়ী-দালাল ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, করোনাকালীন সময়ে স্থবির হয়ে পড়া জনগুরুত্বপূর্ণ এ খাতের উন্নয়নে সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সুচিকিৎসা।
“স্বাধীনতার সুদীর্ঘ পঞ্চাশটি বছর অতিক্রম করে একান্ন বছরে পদার্পণ করেছে দেশ। শোষণ-বঞ্চনার শিকল থেকে মুক্তি লাভের অর্ধশত বছর পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের এহেন নাজুক চিত্র অত্যন্ত দুঃখজনক। এ খাতের অসাধু ব্যবসায়ী-দালাল ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে”