শিশু সন্তানের সামনে মাকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগে বাবাকে (ভিকটিমের স্বামী) আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (৩০মার্চ) দুপুরে মালিবাগ সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এ তথ্য জানান।
২৬ মার্চ, রাত ১ টা। অন্ধকার ঘরে শিশুর কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাশের বাসার লোকজনের। এসে দেখেন মায়ের মৃতদেহের পাশেই বসে কান্না করছে মাত্র দুই বছর বয়সী শিশু আমিরুল ইসলাম ওরফে রাতুল।
সিআইডি জানায়, নেশার টাকা জোগার, দ্বিতীয় বিয়ের কথা গোপন ও দাম্পত্য কলহের জের ধরে শিশুটির সামনেই তার মাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘাতক স্বামী। ঘটনা ভিন্নঘাতে প্রবাহিত করতে লাশ ঘরের ভিতর রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সে।
পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে একটি ভাড়া করা বাসায় আমেনা বেগম (২৫) স্বামী মো. রাসেল (৩০) ও একমাত্র সন্তান আমিরুল ইসলাম ওরফে রাতুলসহ বসবাস করে আসছিলেন।
মুক্তা ধর বলেন, ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। এ হত্যার ঘটনা পারিবারিক বিরোধের জেরে সংগঠিত হয়েছে নাকি অন্য কারণে হয়েছে ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে ভিকটিমের পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
পরে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ নয় স্বামী মোঃ রাসেলই জড়িত। এরপর অভিযান পরিচালনা করে ময়মনসিংহের ভালুকার সীড স্টোর হবিরবাড়ী এলাকা থেকে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রাসেল জানায়, প্রায় ৩ বছর পূর্বে চট্টগ্রাম এলাকায় বসবাসকালে আমেনা বেগম (২৫) এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ২ বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান রয়েছে। টাঙ্গাইল শহরে ভাড়া করা বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে রিকশা চালানোর কাজ করত। আয় উপার্জন কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় এবং নেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় রাসেল তার স্ত্রী আমেনা বেগমের কাছে যৌতুকের দাবিতে মারধর করত। আমেনা বেগম বিষয়টি তার বাবাকে বললে তার পরামর্শে স্বপরিবারে সীতাকুন্ড থানাধীন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের জনৈক নুর উদ্দিনের মালিকানাধীন ঘরে বসবাস শুরু করে।
রাসেলের শ্বশুর তাকে বার আউলিয়া জিরি সুবেদার রুলিং মিলে কাটারম্যান হিসেবে চাকরি নিয়ে দিলে সে চাকরি করতে থাকে। কিন্তু ২০১৮ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা এলাকার রাশিদা বেগমের সঙ্গে মো. রাসেলের প্রথম বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি আমেনা বেগমের কাছে না বলে রাশিদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাসহ নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য বারবার যৌতুকের দাবিতে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের ফলে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। কলহের জের ধরেই সন্তানের সামনে তার মাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ঘটনা ভিন্নঘাতে প্রবাহিত করতে লাশ ঘরের ভিতর রেখে দ্রুত পালিয়ে যায় রাসেল।