logo
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২২ ০৯:০১
আলুর ফলন কমার শঙ্কা, দুশ্চিন্তায় মুন্সীগঞ্জের কৃষক
মহিউদ্দিন আহমেদ সুমন, মুন্সীগঞ্জ

আলুর ফলন কমার শঙ্কা, দুশ্চিন্তায় মুন্সীগঞ্জের কৃষক

সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের কৃষকরা তাদের ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন

আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানীয় জেলা মুন্সীগঞ্জ। তবে চলতি মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের থাবা এলোমেলো করে দিয়েছে সবকিছু। জেলাটিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আলুর উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদরা। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলাটির আলুচাষিরা।

স্বাভাবিক চাষ প্রক্রিয়া অনুযায়ী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জেলায় আলু বপন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ওই সময় হানা দেয় ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। এর প্রভাবে অসময়ে বৃষ্টিপাতে প্রথম দফায় লাগানো মোট কৃষিজমির ৪০ ভাগ বীজ নষ্ট হয়ে যায়।

পরে আলু চাষের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫-২০ দিন দেরিতে ফের বীজ রোপণ করেন চাষিরা। তবে এতেও ফলন ঠিকমতো না হওয়ার শঙ্কা তাদের।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে প্রথম দফায় আলু চাষ শুরু করেন কৃষকরা। আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টও, যা জেলার মোট কৃষিজমির অর্ধেকেরও বেশি। তবে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলুবীজ রোপণ করা হয়। ঠিক ওই সময়ে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে নষ্ট হয় সদ্য রোপণ করা আলুক্ষেত।

১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে পুনরায় বীজ বপন করেন কৃষক। এ সময় বীজের সংকটে এর দাম বেড়ে যায় আড়াই গুণ। ৬০০ টাকা বস্তা বীজের দাম হয়েছিল ১৪-১৫শ টাকা। তবে তাতেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। অসময়ের বৃষ্টিপাত, নিম্নমানের আলুবীজ ও ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীত চলে যাওয়ার কারণে আলুর ফলন খুবই কম হওয়ার শঙ্কা করছেন সবাই।

সদরের মহাকালীতে নিজের আড়াই একর জমিতে তিন লাখ টাকা খরচ করে আলুর চাষ করেছেন মাসুদুর রহমান। তিনি জানান, প্রথম দফায় তার ৫০ ভাগ আলুক্ষেত বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। ২০ দিন পর পুনরায় আবার আলুবীজ বপন করেন তিনি।

মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে অতিরিক্ত বীজ ছিল। তাই অন্য চাষিদের মতো আড়াই গুণ দামে নতুন করে নিম্নমানের বীজ কিনতে হয়নি। অন্যান্য বছর আরো আগে জমি থেকে নতুন আলু তোলা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর দেরিতে চাষ করতে বাধ্য হওয়ায় ফলন দেরিতে উঠছে। আমার জমিতে আলু উঠতে আরো ৪-৫ দিন লাগবে। গরম পড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো ফলন পাব না।’

সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের কৃষক জুয়েল রানা বলেন, ‘আমি ২৪ কাঠা জমিতে আলুর চাষ করেছি। প্রথম দফায় এক বাক্স বীজসহ ৮ বস্তা বীজ আলু লেগেছিল। বৃষ্টিতে সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। পরে ১৪শ টাকা বস্তা দরে বীজ কিনে আবার আলুর চাষ করি। প্রায় আড়াই মাস হলো চাষ করেছি।’

তিরি আরো বলেন, ‘এবার ক্ষেতে রোগের কারণে বেশিরভাগ আলুগাছ জ্বলে গেছে। বেশি করে ওষুধ দিয়েছি। এতে খরচও বেড়েছে। তবে ফলন ভালো হবে না। গত বছর এই পরিমাণ জমিতে ১৩৩ বস্তা আলু হয়েছিল। এবার আলুর পরিমাণও কম হবে এবং মানও ভালো হবে না।’

জাবেদ রহমান নামের আরেক কৃষকও জানালেন আলুর ফলন কম হওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্ষেতে নাভীধ্বসা রোগ দেখা দিয়েছ। এতে করে ফলন কম হবে, আবার মানও ভালো হবে না। আমি ১৬ একর জমিতে আলুর চাষ করেছি। এবার মৌসুমটা প্রায় এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় রোগব্যাধির জন্য ওষুধও বেশি দিতে হচ্ছে। এতে খরচও বেড়ে গেছে। গতবার ছয় হাজার মণ আলু পেয়েছিলাম। দাম ভালো থাকলেও এ বছর আলুতে কৃষকের খরচ উঠবে না।’

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘জাওয়াদের প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছিল তাতে ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আলুর আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত এসব জমিসহ ৩৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দুই হাজার হেক্টর কম জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। তবে বীজ ভালো না থাকা ও দেরিতে বপন করায় এবার ফলন কম হবে।’

রোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছত্রাকের আক্রমণসহ নাভীধ্বসা রোগ সব সময়ই কম-বেশি হয়ে থাকে। এ বছরও সেটা কিছুটা হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফলন কম হওয়ার মূল কারণ আবহাওয়া। আলুর ভালো ফলনের জন্য শীত দরকার। কিন্তু এবার দেরিতে বীজ বপন করায় আলুগাছ শীতের আবহাওয়াটা পায়নি।’