logo
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২২ ০৯:৫৮
‘পানিতে ডুবে দিনে ৩০-৪০ শিশুর মৃত্যু, প্রতিরোধে জরুরি কমিউনিটি ভিত্তিক সচেতনতা’
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘পানিতে ডুবে দিনে ৩০-৪০ শিশুর মৃত্যু, প্রতিরোধে জরুরি কমিউনিটি ভিত্তিক সচেতনতা’

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক জাতীয় ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ছবি- সংগৃহীত

দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০ শিশুর মৃত্যু হয়। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের ধরা হলে ৪০ জনের মৃত্যু হয়। তাই পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কমিউনিটি ভিত্তিক সচেতনতা জরুরি। বুধবার পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক জাতীয় ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ড্রাউনিং প্রিভেনশন (এনএডিপি) এর অধীনে এই ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনএডিপির আহ্ববায়ক সদরুল হাসান মজুমদার বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা ও দেখাশোনার অভাব রয়েছে। প্রায় ৬০ ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে বলে গবেষণায় এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর কারণ এই সময়টার ভেতরে শহর ও গ্রামে পরিবারের অন্য সদস্যরা, বিশেষ করে বাবা-মা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যান।

সদরুল হাসান মজুমদার বলেন, এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের যদি প্রাতিষ্ঠানিক সুপারভিশনে (ডে কেয়ার সেন্টার) রাখা যায় তাহলে ৮০ ভাগ শিশু মৃত্যু বন্ধ করা যায়। যে পরিবারে শিশুর সংখ্যা বেশি সেসব পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি হচ্ছে এবং এটা প্রমাণিত। তাই সচেতনতার জায়গাটা খুব দরকার।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সামগ্রিকভাবে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে প্রথমেই সাঁতারের কথা চিন্তা করা হয়। কিন্তু সাঁতার মনে হলেই সেটাকে একটি স্পোর্টস হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সাঁতার একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষাকারী দক্ষতা, কেবলই খেলাধুলা নয়। গবেষণায় এসেছে, একটি শিশুকে যদি সাঁতার শেখানো যায়, তাহলে তার প্রায় ৯০ শতাংশ ঝুঁকি কমে যায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর।

পানি থেকে তোলার পরও সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় অনেক শিশু শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে সদরুল হাসান মজুমদার বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়ার পর সে শিশুকে পানি থেকে তোলার পর কিছু অবৈজ্ঞানিক-পুরাতন প্রাক্টিসের মাধ্যমে পানি বের করার চেষ্টা করা হয়। আর সেটা করতে গিয়ে মৃত্যুকে আরো ত্বরান্তিত করা হয়। কিন্তু শ্বাসনালীতে যাওয়া পানিটা যদি বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে বের করা যায় তাহলে তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।

আবার পানি থেকে উদ্ধার করারও যে বৈজ্ঞানিক উপায় রয়েছে, সেটাও আমাদের জানা নাই। অথচ পানিতে ডুবে মৃত্যুকে কারণে হোক, অকারণে হোক, অসচেতনতা বা অবহেলা করে হলেও এখন আর অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাই পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি মাল্টি সেক্টরাল স্টেকহোল্ডারদের ভেতরে সমন্বয় করতে হবে। সেইসঙ্গে একে কেবল এনজিওভিত্তিক কার্যক্রম হিসেবে না দেখে আন্দোলন হিসেবে দেখতে হবে, যাতে সমাজে প্রভাব পড়ে।

এনএডিপির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার এনজিও প্রতিনিধি এবং জেলার স্থানীয় সাংবাদিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আট বিভাগের সমন্বয়কদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. রহিমা সুলতানা কাজল এবং রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক তপন কুমার কর্মকার।

অনুষ্ঠানে পানিতে ডুবে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাইলা ইমাম কান্তা। আরো বক্তব্য রাখেন লিঙ্গ বৈষম্য ও নারী বিষয়ক একটিভিস্ট সেলিনা আহমেদ এনা, মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল কালাম মো. হুমায়ূন কবির, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. ইশাকুল কবির, মামালা ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. মোশাররফ তানসেন, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।

আগামী পাঁচ বছর পুরো বাংলাদেশে এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলবে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।