logo
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২২ ১৩:৪৪
মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মারকলিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর  মুক্তিযোদ্ধাদের স্মারকলিপি

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কয়েক হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষরিত ৮ দফা সম্বলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রদানের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাশেম আলী, মোজাম্মেল হোসেন হেলাল, আফতাব আহমদ শিকদার, জুলকারনাইন ডালিম, সারোয়ার জাহান, আবদুল খালেক বিশ্বাস, দীপকচন্দ্র গুপ্ত, আজহারুল ইসলাম, বাহারউল্লাহ মজুমদার।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকুজ্জামান, আবদুল মান্নান, আবদুল মমিন সরকার, ইসরাইল হোসেন গেরিলা, রমিজউদ্দিন আহমদসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

স্মারকলিপির দাবিনামা উত্থাপন করে ‌‌‌একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান গবেষক আবীর আহাদ দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্মারকলিপিতে সংযুক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্যে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

দাবি গুলো হলঃ
১. মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে জাতীয় সংবিধানের যথাযথ স্থানে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‘জয়বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘৩০ লাখ শহীদ’ ও ‘২ লক্ষ সম্ভ্রমহারা মা-বোন’ শব্দগুলো লিপিবদ্ধ করা।
২. বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রণীত মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়ন ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে উচ্চতর বিচার বিভাগ, যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা সুপরিচিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিশন' গঠন এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সৃজনকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমতুল্য অপরাধে বিচার করা।

৩. মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্মৃতি সংরক্ষণ, গবেষণা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে সমুন্নত রাখার কার্যক্রম চালাবে। তবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টির কারিগরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়ে আসছে বিধায় জামুকাকে বিলুপ্ত করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক বিষয়াদি দেখভাল করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আলাদা উইং সৃষ্টি করা,

৪. সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্বহাল করা। কোটা না থাকার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বেকার সন্তানদের বিশেষ বিবেচনায় শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার চাকরিতে সরাসরি নিয়োগ করা।

৫. মুক্তিযোদ্ধা মাসিক সম্মানী থেকে মাসিক ন্যূনতম কিস্তিতে পরিশোধ করার শর্তে সরকারি নকসা অনুসরণ সাপেক্ষে আগ্রহী বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিজ দায়িত্বে ‘বীরনিবাস’ নির্মাণের জন্যে বিনাসুদে ২৫ লক্ষ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ মঞ্জুর করা,

৬. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স, শারীরিক অসুস্থতা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতা বিবেচনা পূর্বক মাসিক সম্মানী ভাতার সাথে ১০ হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা প্রদান এবং গুরুতর অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সিএমএইচ, সরকারি ও বেসরকারী হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা,

৭. জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকেও বিজয় দিবস ও বাংলা নববর্ষে ভাতা প্রদান করা।

৮. দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরাজিত রাজাকার অপশক্তি ও মহলবিশেষের পরাজয়ের প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার কোপানলে পড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গ হত্যা ও নানান অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। সে-প্রক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারবর্গের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।

উপরোক্ত দাবি সমূহ বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে যেকোনো কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে আবীর আহাদ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।