আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য পানি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মানুষের শরীরের প্রায় ৮০% পানি। পানি আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন স্থানের রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে। এই পানিকে আরো অভিনব উপায়ে আরো শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। আর তা হচ্ছে পানির সঙ্গে মধু যোগ করে। আপনি যদি মনে করেন যে, মধুতে তো প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, তাহলে মধু কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে? যদি আপনি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে চলুন জেনে নেই মধুপানির কিছু উপকারিতা-
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
মধু মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। অবশ্যই বিশুদ্ধ এবং জৈবগুণ সম্পন্ন প্রাকৃতিক খাঁটি মধু ব্যবহার করতে হবে। এটি আপনার শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করবে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করবে। এতে আছে প্রচুর এনজাইম, ভিটামিন এবং মিনারেল যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।
২. উচ্চ রক্তচাপ কমায়
দুই চামচ মধুর সঙ্গে পানি যোগ করে ব্যবহার করলে উচ্চ রক্তচাপ কমায়। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত।
৩. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে
যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য মধুপানি বেশ কার্যকর। মধু পাকস্থলির কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। যাদের পেট ফেপে থাকে, তারা এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারেন। এই মধুপানি গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করবে। এটি আধঘণ্টার মাঝেই আপনাকে আরাম প্রদান করবে।
৪. ঠান্ডা দূর করতে মধুপানি
গলা ব্যথা, কাশি, কফ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। মধুতে ঠান্ডা নিরাময় করার উপাদান আছে যা গলা থেকে কফ দূর করে থাকে। তাই ঠান্ডা লাগলে এক গ্লাস গরম মধু পানি পানের পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দিয়ে থাকেন।
৫. ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে
আশ্চর্যজনকভাবে মধুর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনি যদি কাঁচা ও জৈব মধু খেতে পারেন, এতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম রয়েছে, এছাড়া ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম। যুক্তরাজ্যের হারগেটে উপস্থাপিত সম্মেলনে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মানুকা (গধহঁশধ) মধু অ্যান্টি-বায়োটিকে থাকা জীবাণু ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। মধু একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের খারাপ মৌলের সাথে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে ও আমাদের ত্বকের সমস্যা হ্রাস করে।
৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাতে মধু পানি জাদুর মতো কাজ করে থাকে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কসুম গরম মধু পানি পান করুন। সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি আপনার পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, যা আপনার ওজন বাড়াতে নয় বরং কমাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণ চিনির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। মধুপানি পান করলে ক্যালোরি ৬৪% পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া এটি চিনির প্রতি আসক্তি বা মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি যেমন কেক, চকলেট, কোলা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
৭. দেহের কার্যশক্তি বৃদ্ধি করে
মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক চিনি যা আমাদের দেহে এনার্জির সরবরাহ করে মধু দেহের মেদ না বাড়িয়ে। তাই প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস মধু পানি সারাদিনের কার্যশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
৮. ত্বক পরিষ্কার রাখে
মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ত্বকের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৯. তারুণ্য বজায় রাখতে
তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়ায়।
১০. দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখে
মধু পানি আপনার শরীরের পানি সরবারহ করে থাকে। ফলে সকালের এক গ্লাস পানি আপনার সারাদিনের পানির চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করে থাকে।
১১. রক্ত পরিষ্কারক
এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রণ খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার করে।
১২. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
মধুতে এনজাইম আছে যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। যদি আপনার হজমে সমস্যা থাকে তবে খাওয়ার পর এক গ্লাস কুসুম গরম মধু পানি পান করুন, দেখবেন হজমের সমস্য দূর হয়ে গেছে।
১৩. অ্যালার্জিমুক্ত থাকতে সহায়তা করে
প্রতিদিন ১ গ্লাস মধু পানি অ্যালার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন সকাল বেলা এক গ্লাস মধু পানি পানের ফলে দেহের পোলেন অংশগুলো যেসব স্থানে অ্যালার্জির সংক্রমণ বেশি হয় সেসব স্থানে এক ধরনের প্রতিরক্ষা পর্দার সৃষ্টি হয় যা সংবেদনশীলতা কমায় ও অ্যালার্জির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। মধু শরীরকে জলয়োজিত করে বিভিন্ন এলার্জি থেকে রক্ষা করে।
১৪. স্বরভঙ্গ প্রশমিত করে
মায়ো ক্লিনিকের মতে, গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে, এটি গলদাহ বেদনা এবং জ্বালা করার বিরক্তি কমাতে সাহায্য করে। গরম পানি শুধু ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে, সাথে মধু মিশিয়ে ঠান্ডার সমস্যা কমে যায়। কখনো কখনো একটি গলদাহ থেকে কাশির জ্বালা সৃষ্ট হয়, তখন এই মিশ্রণ আপনার কাশি কমাতে সাহায্য করবে।