logo
আপডেট : ২ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:৪৪
জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ
মানবিক সহায়তার তালিকায় নেই ৬৪১ পরিবার, দুশ্চিন্তায় জেলেরা
মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট

মানবিক সহায়তার তালিকায় নেই ৬৪১ পরিবার, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

জাল ঠিক করছেন বাগেরহাটের কচুয়ার জেলেরা

জাটকা আহরণে বিরত থাকা জেলেদের জীবনযাত্রা নির্বাহে মানবিক সহায়তা কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছে বাগেরহাটের কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলার জেলেরা। অন্যান্য উপজেলার জেলেরা তালিকাভুক্ত থাকলেও, তালিকায় না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দুই উপজেলার ৬৪১টি জেলে পরিবার। দ্রুত তালিকাভুক্ত করে মানবিক সহায়তার দাবি জানিয়েছে জেলে ও এলাকাবাসী।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ইলিশের বংশ বৃদ্ধিতে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণ বন্ধ থাকে। এই সময় জেলেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির উদ্যোগ নেয় সরকার।

এই কর্মসূচির আওতায় কর্মহীন জেলেদের নিবন্ধন অনুযায়ী, জনপ্রতি জেলেদের ২০ কেজি করে চার মাসে ৮০ কেজি চাল দেওয়া হয়। এ বছর জেলার ৯ হাজার ৩০০ পরিবারের অনুকূলে প্রায় ৭৪৮ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কচুয়া উপজেলার ৪৩৬টি পরিবার এবং ফকিরহাটের ২০৫টি জেলে পরিবার।

কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে পরিবারের আবুল হোসেন জানান, বাপ-দাদার পেশা মাছ আহরণ করে সংসার চলে। মাছ না ধরলে তাদের ভাত জোটে না। তারপরও সরকারের নিয়ম মেনে এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে তারা সাগরে যান না।

আট মাস জাটকা ধরা নিষেধ থাকলেও প্রতিবছর চার মাসে ২০ কেজি করে চাল পেতেন তারা। কিন্তু এবার তাও বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানো ছাড়া উপায় নেই।

একই এলাকার জেলে লোকমান হোসেন বলেন, ‘বগা এলাকার বেশিরভাগ মানুষই সাগরে মাছ ধরে। আমরা প্রকৃত জেলে। আমাদের বাদ দিলে, পুরো দেশের জেলেদের বাদ দেওয়া উচিত। ২০ কেজি চালে সংসার না চললেও অনেক সাপোর্ট হতো। এটা বন্ধ হওয়ায় খুব বিপদে পরে গেলাম।’

কচুয়া উপজেলা জাতীয় মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আমানী বলেন, ‘কচুয়া উপজেলায় ২ হাজার ৪০০ নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। যার মধ্যে ৪৩৬ জেলে প্রতিবছর মানবিক সহায়তা পায়।’

তিনি আরো বলেন, এ বছর এই এলাকার জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে নিহত, আহত ও নিখোঁজ রয়েছে। অথচ জাটকা আহরণ নিষিদ্ধের এই সময় বেকার জেলেদের মানবিক সহায়তার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতবাক।’

জেলেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহে দ্রুত তালিকাভুক্ত করে তাদেরকে মানবিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, ‘কচুয়া ও ফকিরহাটের বাদ পড়া জেলেদের মানবিক সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করি, দ্বিতীয় ধাপে পুনরায় এসব জেলে তালিকাভুক্ত হয়ে মানবিক সহায়তা পাবেন।’

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে কচুয়া ও ফকিরহাটকে বাদ দিয়েছে। এই দুই উপজেলার জেলেরা যাতে মানবিক সহায়তা পায় সেজন্য উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়েছে। এই দুই উপজেলার কর্মহীন জেলেরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’