logo
আপডেট : ২ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:১২
মতলবে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
চাঁদপুর প্রতিনিধি

মতলবে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন অর্থাৎ গরমের প্রকোপে এই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও জেলা সিভিল সার্জন অফিস।

গত ২১ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই ১২ দিনে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ২ হাজার ৮৭২ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। রোগী এ ভর্তির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দেড় গুণ।

মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল ও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৪০ থেকে ২৫০ জন রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা-সেবা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের দেওয়া এক তথ্যে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীদের মধ্যে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের কক্ষগুলোতে ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা। পর্যাপ্ত বেডের অভাবে রোগীদের বারান্দায় বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা-সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বারান্দায় চিকিৎসাধীন চাঁদপুর সদরের বিশ্বজিৎ (২৪) জানান, গত তিনদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপায় না পেয়ে মতলব ডায়রিয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। চিকিৎসাসেবা চলছে। খোলা খাবার থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

কুমিল্লার লালমাই এলাকার সামছুননাহার (৫০) জানান, বেশ কয়েকদিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

হাসপাতাল অফিস সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা ৭০। তবে প্রতিদিন ৩০০ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। পর্যাপ্ত জনবল, খাবার স্যালাইন ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। আপাতত রোগীর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়লে সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসকরা জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। দূষিত খাবার ও দূষিত পানি পান করা, ময়লা মুখে দেয়ার কারণে শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও এখানে ডায়রিয়া রোগী আসছে। ভর্তি হওয়া রোগীর ৪০ শতাংশই মাঝারি থেকে তীব্র পানি শূন্যতায় ভুগছে।

আইসিডিডিআরবি’র সিনিয়র মেডিসিন অফিসার ডা. চন্দ্র শেখর দাস বলেন, ‘ভর্তি হওয়া রোগীদের সুস্থ হয়ে উঠতে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাতদিন সময় লেগে যাচ্ছে। শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, সাত মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন, একটি করে বেবিজিংক ট্যাবলেট এবং বাড়তি খাবারের মধ্যে সুজি, খিচুরি, ডাবের পানি, চিড়াসহ তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত গরম, ময়লা পানি পান করা, বাইরের খাবার ও পুকুরের পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কোথাও পানির সমস্যা হলে পুকুরের পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করতে হবে। ভালোভাবে হাত ধুয়ে ও বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইনের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’