logo
আপডেট : ২ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৩১
যেমন হলো বিশ্বকাপের গ্রুপিং
ক্রীড়া ডেস্ক

যেমন হলো বিশ্বকাপের গ্রুপিং

বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২ এর ড্র

১২ বছর আগে কাতার যখন বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ফিফার স্বীকৃতি পায় তখন থেকেই আলোচনায় ছিল দেশটির আবহাওয়া। ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলো সেসময় এই বিশ্বকাপে অংশ নেবে কিনা তা নিয়ে নানা ধরনের সমস্যার কথা জানাচ্ছিল। ইউরোপের লিগগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন আশঙ্কার কথাও বলেছিল উয়েফা। আয়োজক হওয়ার জন্য কাতার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে এমন অভিযোগও ওঠে তখন। তবে শেষ পর্যন্ত সব সংকট জয় করেই বিশ্বকাপ ফুটবল আসছে আরব বিশ্বে। সারা বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সেখানে তৈরি করা হয়েছে টুপিসহ নানা আকৃতির কেন্দ্রীয় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল বিশাল ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম।

চিরায়ত রীতি ভেঙে মরুভূমির দেশটিতে নভেম্বরে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। বিশ্বকাপ হয় সাধারণত জুন-জুলাইয়ে। তবে প্রচণ্ড গরমের কথা ভেবেই কাতার বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে বছরের শেষে।

সময়ের হিসাবে এখনো বাকি ৮ মাস। তবে বিশ্বকাপের উত্তাপ এখন থেকেই পেতে শুরু করেছে ভক্ত-সমর্থকরা। কারণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বিশ্বকাপের ড্র। আটটি গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৩২টি দল। দেখে নেওয়া যাক কেমন হলো কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপিং।

৩২ দলের মধ্যে স্বাগতিক কাতারসহ ২৯ দল নিশ্চিত হয়ে গেছে। ড্রয়ে যে তিনটি জায়গা খালি আছে, সেগুলো নির্ধারিত হবে দুটি আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের জয়ী এবং ইউরোপীয় প্লে-অফের জয়ী দল দিয়ে। আগেই ঠিক করা ছিল স্বাগতিক কাতার হবে ‘এ’ গ্রুপের ১ নম্বর দল। এরপর লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে কোন গ্রুপে পড়বে কোন দেশ।

মার্চের ফিফা র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী ড্রয়ের জন্য চারটি পাত্রে-এ রাখা হয় দলগুলোর নাম। স্বাগতিক কাতারের সঙ্গে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৭টি দলগুলোর নাম রাখা হয় এক নম্বর পাত্রে। র‌্যাঙ্কিংয়ের পরের আটটি দলের নাম দুই নম্বর পাত্রে, পরের আটটি দলের নাম তিন নম্বর পাত্রে। র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী পরের পাঁচ দল ও বাকি থাকা দুটি আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ এবং ইউরোপিয়ান প্লে-অফ জয়ী দলের নাম রাখা হয় ৪ নম্বর পাত্রে।

নিয়মানুযায়ী এক গ্রুপে একই মহাদেশের একাধিক দল থাকবে না। ব্যতিক্রম শুধু ইউরোপ। তবে কোনো গ্রুপে তাদেরও দুটির বেশি দল নেই। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতারের মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর।

এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য ‘মৃত্যুকূপ’ বলতে তেমন গ্রুপ নেই। তারপরও একটি গ্রুপকে ভাবা হচ্ছে বেশ কঠিন। আর সেটি হলো ‘ই গ্রুপ। এই গ্রুপে রয়েছে সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন ও জার্মানি। তাদের সঙ্গী এশিয়ার দেশ জাপান। আরেকটি দল আসবে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলে।

বিশ্বকাপ ড্র হওয়ার পর সবার চোখ থাকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দিকে। কেমন গ্রুপে পড়ল দল দুটি। দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা পড়েছে ‘সি’ গ্রুপে। যেখানে তাদের সঙ্গী সৌদি আরব, মেক্সিকো ও পোল্যান্ড। অন্যদিকে রেকর্ড পাঁচবারের শিরোপাজয়ী ব্রাজিল ‘জি’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড ও ক্যামেরুনকে।

আট গ্রুপে প্রতিটির শীর্ষ দুটি করে দল যাবে নকআউট পর্বের প্রথম ধাপে, অর্থাৎ শেষ ষোলোয়। সেখানে ‘এ’ থেকে ‘ডি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো মুখোমুখি হবে একে অন্যের। একইভাবে মুখোমুখি হবে পরের চার গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো। সেক্ষেত্রে শুধু সেমিফাইনালে গেলেই দেখা হতে পারে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। তার আগে নেই কোনো সম্ভাবনা।

গ্রুপ পর্বে আগামী ২২ নভেম্বর নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। ২৪ নভেম্বর সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করবে ব্রাজিল।

বিগত কয়েক আসরের তুলনায় কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে সহজ গ্রুপই পেয়েছে আর্জেন্টিনা। তবে তিন দলের কাউকেই খাটো করে দেখতে রাজি নন দলটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কোচ নিজেদের গ্রুপে দেখছেন কঠিন সব প্রতিপক্ষ। পোল্যান্ড বিশ্বকাপে এসেছে প্লে-অফে খেলে। সৌদি আরব অবশ্য এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ে নিজেদের গ্রুপের সেরা হয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে। আর মেক্সিকো কনকাকাফ অঞ্চল থেকে বাছাইয়ে দ্বিতীয় হয়ে। শক্তি ও সামর্থ্যের দিক থেকে তিন দলই আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশ পিছিয়ে।

অন্যদিকে আর্জেন্টিনা শুধু বিশ্বকাপের বাছাইয়ে নয়, স্কালোনির কোচিংয়ে কয়েক বছর ধরেই আছে দারুণ ছন্দে। সব মিলিয়ে টানা ৩১ ম্যাচে অপরাজিত তারা, যার শুরুটা হয়েছিল ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এ অপরাজেয় পথচলায় রয়েছে গত বছরের কোপা আমেরিকার শিরোপাও। যার মধ্য দিয়ে দেশটি তাদের মেজর টুর্নামেন্টে ২৮ বছরের শিরোপা খরা ঘুচিয়েছে।

ড্র অনুষ্ঠান শেষে গ্রুপ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ৪৩ বছর বয়সী স্কালোনি বলেন, কোনো সহজ ম্যাচ আশা করছেন না তিনি। বলেন, ‘(গ্রুপে) যে কোনো দলকে মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম এবং যে গ্রুপে পড়েছি তার জন্য আমরা প্রস্তুত। এই গ্রুপে কঠিন সব দল রয়েছে। প্রতিপক্ষ হিসেবে মেক্সিকো কতটা কঠিন, তা আমরা জানি। পোল্যান্ড সুইডেনকে (প্লে-অফের ফাইনালে ২-০ গোলে) ভালোভাবেই হারিয়েছে এবং (সৌদি) আরব খুব ভালো সুশৃঙ্খল একটি দল।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবাইকে সম্মান করি। আমাদের বিশ্বাস আছে, আমরা ভালো করতে পারি। গ্রুপ পর্ব ভালো করতে পারি, কিন্তু (প্রতিপক্ষ দলগুলোকে) সম্মান সর্বোচ্চ দিতে হবে।’

অন্যদিকে ব্রাজিলের কোচ তিতের মতে, প্রতিটি গ্রুপেই সবার জন্য কাজটা হবে কঠিন। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ‘জি’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড ও ক্যামেরুনকে। গত রাশিয়া বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের গ্রুপে ছিল সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ড। সেবার তাদের অপর সঙ্গী ছিল কোস্টারিকা।

ড্রয়ের পর তিতে বলেন, নিজেদের গ্রুপের সবকিছু তার কাছে গত আসরের মতোই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুকূপও নয়, সহজও নয়, প্রতিটি গ্রুপই কঠিন। (নিজেদের গ্রুপ প্রসঙ্গে) সবকিছু একই (২০১৮ সালের গ্রুপের মতো)। এবার শুধু কোস্টারিকা নেই।’

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল পড়েছে এইচ গ্রুপে। যেখানে তাদের সঙ্গী তিন মহাদেশ থেকে আসা তিন দল। দক্ষিণ আমেরিকার উরুগুয়ে, আফ্রিকার ঘানা ও এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া। ফলে এই গ্রুপটিতেও লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি, তা সহজেই অনুমেয়।

সারা বছর প্রায় র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা দল বেলজিয়াম পেয়েছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দুই দল। এফ গ্রুপে বেলজিকদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো দল একটি, ক্রোয়েশিয়া। বাকি দুই দল ৩২ বছর পর বিশ্বকাপে আসা কানাডা ও মরক্কো।

দুইবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স পড়েছে ডি গ্রুপে। ফরাসিদের জন্য স্বস্তির গ্রুপই বলা চলে। কারণ এখানে আছে ডেনমার্ক, তিউনিশিয়া। বাকি দল আসবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলে।

কাগুজে বাঘ খ্যাত ইংল্যান্ড পড়েছে বি গ্রুপে। তাদের প্রতিপক্ষও বলতে গেলে সহজ। আছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। বাকি একটি দল আসবে প্লে-অফ খেলে।

এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার পড়েছে এ গ্রুপে। বাকি তিন প্রতিপক্ষ ইকুয়েডর, সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডস।

 

আরও পড়ুন: এক নজরে কাতার বিশ্বকাপের ফিক্সচার