logo
আপডেট : ৩ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:০৩
নির্মাণাধীন ব্রিজে ফাটল
রংপুর প্রতিনিধি

নির্মাণাধীন ব্রিজে ফাটল

রংপুরের মিঠাপুকুরে নির্মাণাধীন ব্রিজে ফাটলের অংশ

রংপুরের মিঠাপুকুরে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে এ ঘটনাটি ঘটেছে। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর।

এদিকে নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই ব্রিজে ফাটল দেখা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ব্রিজটির সাইডে স্কেবেটর দিয়ে মাটি দেওয়ার সময় ফাটল দেখা দিতে পারে মনে করছেন উপজেলা প্রকৌশলী। তবে চেয়ারম্যানের দাবি, নতুন করে ব্রিজটি নির্মাণ করা হোক।

মিঠাপুকুর প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের মিলবাজার এলাকায় চলতি অর্থ বছরে ১৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় ৬ দশমিক ৯ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ৮৮ মিটার প্রস্থ ব্রিজটি নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। লালমনিরহাটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্স এই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ ও পাইকারের হাট হয়ে মিলবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা। প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ রংপুর সদর উপজেলায় যাতায়াত করতে এই রাস্তাটি ব্যবহার করে থাকেন। রাস্তাটির তিনমাথা পাইকড়েরতল এলাকায় ওই ব্রিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কেউই এতে গুরুত্ব দেয়নি। সম্প্রতি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দেওয়ায় এখন সবাই ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ব্রিজের ফাটল ঢাকতে রাতের আধারে সিমেন্ট দিয়ে প্রলেপ দিয়েছেন ঠিকাদারের লোকজন। তারপরও কয়েকটি স্থানে ফাটল দৃশ্যমান রয়েছে ।
সেখানকার বায়ান্নবাজারের মোজাহার আলী বলেন, ‘ব্রিজটি নির্মাণ করতে ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। দিনের বেলা কাজ না করে রাতের বেলা কাজ করছে। এখন তারা ব্রিজের ফাটল ঢাকতে চেষ্টা করছে। কিন্তু নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারের কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ভবিষ্যতে ব্রিজটি ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা চাই, ফাটল দেখা দেয়া ব্রিজটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হোক।’

একই গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরেই বিষয়টি খেয়াল করছি। কিন্তু ঠিকাদার স্থানীয় লোকজনকে ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে ব্রিজটির কাজটি শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। এরই মধ্যে তো ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রিজটি নির্মাণ করতে শুরু থেকে ঠিকাদার লুকোচুরি করছেন। রাতের আধারে কাজ করেছেন তারা। স্থানীয় কয়েকজনকে ম্যানেজ করে কাজটি শেষ করতে চেয়েছেন। কিন্তু এলাকার মানুষের প্রতিবাদের কারণে করতে পারেননি।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণাধীন ব্রিজের ফাটলের বিষয়টি ধামাচাপার চেষ্টা করছেন ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রকৌশলী। ইতোমধ্যে ব্রিজের ফাটল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু ২০ লাখ টাকার এই ব্রিজটি নির্মাণে যে অনিয়ম হয়েছে, তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।

স্থানীয় খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসীর অভিযোগের সাথে আমিও একমত। নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহারের কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে কিনা বিষয়টি তদন্ত করা উচিত। আমি উপজেলা প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।’

নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্সের মালিক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘নির্মাণবিধি মেনেই কাজ হচ্ছে। এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিছু কারণে শেষ হয়নি। আর ফাটল দেখা দেয়ার বিষয়টি সাময়িক সমস্যা। উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে দেখা করে কথা বলেছি। তিনিই সব কিছু দেখবেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নির্মাণাধীন ব্রিজটির সাইডে স্কেবেটর দিয়ে মাটি দেওয়ার সময় ফাটল দেখা দিতে পারে। আমরা বিষয়টি তদারকি করছি। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটা তেমন গুরুতর বা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তারপরও আমরা সবকিছু দেখেই ব্যবস্থা নিব।’