বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন অস্ত্র কেনাকাটা বিষয়ক চুক্তি একুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) এবং অস্ত্রবিষয়ক গোপন তথ্য বিনিময় ও সুরক্ষার চুক্তি জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) সইয়ে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ‘জিসোমিয়া’ অ্যাগ্রিমেন্টের খসড়াও বাংলাদেশকে হস্তান্তর করেছে দেশটি।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক এ দুটি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরবর্তী ধাপ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এর আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চুক্তির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলেও উভয় দেশই ইতিবাচক। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) চুক্তি সই করে যুক্তরাষ্ট্র। একই বছর ভারতের সঙ্গে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) চুক্তি সই করে দেশটি। এবার দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে এই দুইটি চুক্তিই সইয়ের আগ্রহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
অস্ত্রবিষয়ক গোপন তথ্য বিনিময় ও সুরক্ষার চুক্তি জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) এর খসড়া চলতি বছরের ২০ মার্চ বাংলাদেশকে হস্তান্তর করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেনের কাছে খসড়াটি হস্তান্তর করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। এদিন ন্যুল্যান্ড ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গ টেনে বৈশি^ক নিরাপত্তায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পথ চলার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (৪ এপ্রিল) ওয়াশিংটনে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে শনিবার (২ এপ্রিল) রাতে ঢাকা ত্যাগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এর দুদিন পর ৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে উভয় দেশের মধ্যে ডিফেন্স ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১১ মে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ক সংলাপও অনুষ্ঠিত হবে।
উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও সংলাপ দুটিতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যু, খুনি রাশেদকে ফেরতসহ সকল বিষয়ই আলোচনায় স্থান পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আকসা ও জিসোমিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের আলোচনা চলছে। হুট করেই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে এমন নয়। ঢাকা-ওয়াশিংটন পরবর্তী বৈঠকগুলোতেও দেশটি এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইতে পারে বা আলোচনা হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের চুক্তি সইয়ের মতো বিষয়গুলো যেমন স্পর্শকাতর, তেমনি গুরুত্বপূর্ণও বটে। খুব দ্রুতই যে চূড়ান্ত কিছু হতে যাচ্ছে বিষয়টি এমনও নয়। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত সংলাপে হবে সেটি বলা যায় না। এজন্য আরো সময়ের প্রয়োজন হবে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে এ লক্ষ্যে ঢাকা সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস। সে সময়ে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকার সঙ্গে আকসা ও জিসোমিয়া চুক্তি করতে চায় ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক।
দুই দেশের মধ্যে খুব আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সামরিক যোগাযোগ রয়েছে। চুক্তিগুলো হলে যোগাযোগ আরো বাড়বে। দুর্যোগসহ একাধিক প্রাকৃতিক সংকট মোকাবিলায় দুই দেশের সামরিক বাহিনী যাথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবে। দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ফলে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
একই বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তাবিষয়ক তৎকালীন সহকারী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী র্যান্ডল শ্রাইভার। আকসা ও জিসোমিয়া চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সে সময় তিনি বলেন, চুক্তিগুলো দু’পক্ষের কাজে লাগবে। যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ প্রক্রিয়ায় এবং সঠিক উপায়ে চুক্তি করতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো নিবিড় করতে চায়।