logo
আপডেট : ৩ এপ্রিল, ২০২২ ১১:২১
রোজায় ভেজাল প্রতিরোধে বিএসটিআই
৭৪৮ পণ্যের নমুনা সংগ্রহ, ৬৭০টি মানসম্মত
জুনায়েদ হোসাইন

৭৪৮ পণ্যের নমুনা সংগ্রহ, ৬৭০টি মানসম্মত

বিএসটিআই এর প্রধান কার্যালয়। ফাইল ছবি

নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে প্রতিবছর ভোক্তার স্বার্থে পবিত্র রমজান মাস ও তার আগে বিশেষ কর্মসূচি-অভিযান পরিচালনা করে থাকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এবছরও এ মাস উপলক্ষে খাদ্য পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং নকল ও নিম্নমানের পণ্যের বিরুদ্ধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সংস্থাটি।

গতকাল শনিবার বিএসটিআই’র পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে-রমজান উপলক্ষে ভেজাল ও নকল পণ্য প্রতিরোধে বিএসটিআই আগাম পণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা চালিয়েছে। এর অংশ হিসেবে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ইফতার ও সেহরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য পণ্যের মোট ৭৪৮টি নমুনার সংখ্যা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৬৮৫টির মান পরীক্ষায় মানসম্মত নমুনা পেয়েছে ৬৭০টি পণ্যের, নিম্নমানের নমুনা পাওয়া ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি। নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে ৬৩টি পণ্যের। বিএসটিআই’র সার্ভিল্যান্স টিমের মাধ্যমে খোলাবাজার থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।

বিএসটিআই জানিয়েছে, রমজান মাসে মানসম্মত খাদ্য ও পানীয় বিশেষ করে- মুড়ি, খেজুর, সফট ড্রিংকস পাউডার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, ফ্রুট সিরাপ, ফ্রুট ড্রিংকস, ভোজ্যতেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডুলস, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, লাচ্ছা সেমাই, সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট এবং ইফতার সামগ্রী বিক্রি বা বিতরণের উপর বিএসটিআই’র নজরদারি জোরদার করেছে।

সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, পবিত্র মাস উপলক্ষে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে- পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, নকল ও নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ রোধকল্পে অতিরিক্ত মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ঢাকা মহানগরীতে বিএসটিআই’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’র নেতৃত্বে পণ্যের সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণ এবং কারচুপি রোধকল্পে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ছুটির দিনসহ স্বাভাবিক কার্যদিবসেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। ঢাকা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় যেমন- নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও ভৈরব এলাকায় মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে।

এছাড়া জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএসটিআই’র সকল বিভাগীয় বা জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিএসটিআই’র সকল কার্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে র‌্যাব ও মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলাদেশ পুলিশের মাধ্যমে পরিচালিত মোবাইল কোর্টে বিএসটিআই’র কর্মকর্তাগণ সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে বিএসটিআই পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য এবং ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধে জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত ৯ মাসে কার্যক্রমের হিসাব প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংস্থাটি।

সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, পণ্যের (ড্রিংকিং ওয়াটার, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ফর্টিফাইড ভোজ্যতেল, আয়োডিনযুক্ত লবণ, নকল ও নিম্নমানের প্রসাধনীসহ) মান নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স টিমের কার্যক্রমের মধ্যে মোট ৬২৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এসময় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৫৫টি। জরিমানা আদায় হয়েছে ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ২০ জনকে। ১৭টি কারখানাকে সিলগালা করা হযেছে। সার্ভিল্যান্স টিমের অভিযান সংখ্যা ৯৯০টি, এর মধ্যে ৮০টি মামলা করা হয়েছে।

এছাড়া পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধে মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রমের মধ্যে ৪১৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়। এর মধ্যে ৭৫২টি মামলা করা হয়। জরিমানা আদায় হয় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয় ৩ জনকে। পেট্রোল ডিসপেনসিং ইউনিট সিলগালা হয় ৩৮৩টি। সার্ভিল্যান্স টিমের অভিযান সংখ্যা ৩৮৯টির মধ্যে মামলা হয়েছে ৭১টি।

অন্যদিকে গত নয় মাসে বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৭৫টি ফলমূলের নমুনা সংগ্রহ করে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় কোনটিতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে বিএসটিআই দাবি করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানগণ।