logo
আপডেট : ৩ এপ্রিল, ২০২২ ১২:১৪
রমজানে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

রমজানে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা বাজারে সবজি কিনছেন ক্রেতারা

বিগত দুই বছর করোনায় টালমাটাল ছিল গোটা দেশ। কর্মহারিয়ে বেকার হয়েছে অনেক মানুষ। অনেক নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা অন্ন, বস্ত্রের ক্ষেত্রে করেছে কাটছাট। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ চেষ্টা করছে ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু বারবারই পণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন থামিয়ে দিচ্ছে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাকে।

সেই সঙ্গে সিয়াম সাধনার মাস রমজান উপলক্ষে বেড়েছে সকল ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এই মূল্যবৃদ্ধি মানুষের দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজরে গিয়ে টাকার সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়াই নির্ধারিত পরিমাণের থেকে কম পণ্য কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অনেককেই।

রজমানের প্রথম দিনে ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা, পুরাতন হাটকোলা, চাকলাপাড়া, মডার্ন মোড়, হামদহসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শশা, বেগুন, ধনিয়ারপাতা, লেবু, মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে গড়ে ৩৫ টাকা। তবে স্বাভাবিক রয়েছে ছোলার দাম। কমেছে পেঁয়াজের দাম। অন্যদিকে রমজানকে ঘিরে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে একশ টাকা।

পবিত্র রমজানকে ঘিরে কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে শশা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, বেগুন ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ধনিয়ার পাতা ৪০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে একশ থেকে ১১০ টাকা, লেবুর দাম হালিতে ২৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে গড়ে ৩০ টাকা।

বর্তমানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫ টাকা দরে। ছোলার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা দরে। এদিকে তেলাপিয়া, শিং, রুই, ইলিশসহ সব মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে গড়ে ১০ টাকা থেকে একশ টাকা।

শহরের নতুন হাটখোলা বাজারে পণ্য কিনতে আসা ইসাহাক আলী জানান, রমজান শুরু হয়েছে কিন্তু বাজার দাম কমেনি বরং বেড়েছে। সব মালের দামে আগুন। চলব কি করে। বেগুন, মরিচ, শশা, লেবু সব জিনিসের দাম বেড়েছে। পবিত্র মাসে দাম কমানো উচিত অথচ বাজারে দাম বেড়েই যাচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। পণ্য মূল্যের কাছে হার মানতে হচ্ছে।

শরিফা খাতুন বলেন, ‘রমজানে ইফতারের জন্য বাজার থেকে এক কেজি শশা কিনলাম ৫৫ টাকা দিয়ে। সব জিনিসই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কোথাও একটু কম পাচ্ছি না। সব জায়গাতেই খালি বেশি বেশি।’

শহরের হাটগোপালপুর এলাকার বাসিন্দা বাহার বিশ্বাস বলেন, ‘শহরে এসেছিলাম কিছু কাজে। ভাবলাম কিছু তরিতরকারি কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু বাজারে এসে শুধু দু-কেজি বেগুন আর দুই হালি লেবু কিনলাম। মনে হল গ্রামের তুলনায় শহরে দামটা অনেক বেশি।’

অপর ক্রেতা শরিফ বিশ্বাস জানান, বাজারে যে ঊর্ধ্বগতি এটা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজদারি বেশি প্রয়োজন। কেন না এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা প্রতি বছরই এমন সুযোগ কাজে লাগায়। তাদের কঠোর ভাবে দমন করা প্রয়োজন। অন্যথায় এক সময় হয়তো পুরোপুরি ভাবেই তাদের কাছে জিম্মি হয়ে যাব।

নতুন হাটখোলা বাজারের সবজি বিক্রেতা অজিত বিশ্বাস জানান, রমজানের শুরুতেই কিছু জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এক সপ্তাহ পরে আর বৃদ্ধিটা থাকে না। কারণ শুরুতে বেগুন, শশা, লেবু, ধনিয়ার পাতাসহ ইফতার ও সাহরিতে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস মানুষ বেশি কিনে থাকে। ফলে চাহিদা বেশি থাকায় ও সরবরাহ কমে যাওয়াই দামটা বেড়ে যায়। তবে আর সাতদিন পর নিত্যপণ্যের বাজার হয়তো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বিক্রেতা হাফিজুর রহমান জানান, ছোলার দাম বাড়েনি, পেঁয়াজের দাম কমেছে। মোটামুটি সব জিনিসের দাম স্বাভাবিকই রয়েছে। ক্ষেত থেকে চাষিরা নতুন পেঁয়াজ বাজারে আনছে ফলে সরবরাহ বেশি থাকায় হয়তো আরো দু-এক টাকা কমতে পারে।

ঝিনাইদহ বিপণন কর্মকর্তা (মার্কেটিং অফিসার) গোলাম মারুফ খান জানান, ইতোমধ্যেই বাজার মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রমজানকে ঘিরে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেন পণ্য মূল্য বাড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি। ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫ জন কর্মকর্তা বাজার তদারকির দায়িত্ব পালন করছি।’