logo
আপডেট : ৪ এপ্রিল, ২০২২ ১২:২৮
রমাদানের মাসআলা মাসাইল
ফিকহে রমাদান: সাওয়াল-জওয়াব
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফিকহে রমাদান: সাওয়াল-জওয়াব

পবিত্র মাহে রমজান- রহমত ও নাজাতপ্রাপ্তির মাস

সাওয়াল: রমজান মাসে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে যে আহার গ্রহণ করা হয়, তাকে আরবীতে ‘সেহেরী’ নাকি ‘সাহারী’ বলা হয়?


জওয়াব: সেহরী নয় সাহরী।


ব্যাখা: ‘সাহরী’ শব্দটি আরবী ‘সাহর’ থেকে উদ্ভুত। সাহর শব্দের অর্থ হলো রাতের শেষাংশ বা ভোর রাত। আর সাহরী অর্থ হলো শেষ রাতের খাবার বা ভোরের খাবার। পরিভাষায় সাহরী বলা হয়- মুমিন মুসলিমগণ রোযা পালনের উদ্দেশ্যে শেষ রাতে ফজরের সময়ের পূর্বে যে আহার করে থাকেন তাকে। কুরআনুল কারীমে সূরা আলে ইমরানের ১৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: যারা সাহরীর সময় ক্ষমা প্রার্থনাকারী। সূরা যারিয়াতের ১৮ নাম্বার আয়াতে এসেছে: তারা সাহরীর সময় ক্ষমা প্রার্থনা করে। দিওয়ানে হযরত আলী (রা.) তে আছে: ‘ওয়া মান তলাআল ঊলা সাহারাল লায়ালী’ (যারা ঊর্ধ্বে উঠেছেন, তারা রাত জেগেছেন)। (নাহজুল বালাগাহ)।


‘সেহরী শব্দটি’ সেহর থেকে নির্গত; যার অর্থ হলো: যাদু-মন্ত্র, ব্ল্যাক ম্যাজিক, কুফরী কালাম ইত্যাদি। তাই সেহরী অর্থ হলো: যাদু-মন্ত্র ও কুফরী কালাম সংক্রান্ত বিষয় বা যাতে যাদু-মন্ত্র ও কুফরী কালাম আছে অথবা যার সাথে যাদুবিদ্যার সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং সেহরী খাওয়া মানে হবে- যাদু-মন্ত্র কুফরী কালামের সাথে সম্পর্কিত কোন কিছু খাওয়া। সেহর বা যাদু সংক্রান্ত বিষয়টি সমগ্র কুরআন মাজীদে ৬১ বার উল্লেখ হয়েছে।


অতীব পরিতাপের বিষয় হলো- আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ এই ‘সাহরী’কে বলেন সেহরী। আরো দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যায়, শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাপানো রমযানের ক্যালেন্ডার বা সময় সূচীগুলোতেও অনেক ক্ষেত্রে এ ভুল করতে দেখা যায়। জ্ঞানী-গুণী ও শিক্ষিত আলেম-উলামাগণের এই ধরণের অসতর্কতা দেখলে আর দুঃখ করারও জায়গা থাকে না। বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় বলতে হয় “কুইনিনে জ¦র সারাবে! কুইনিন সারাবে কে?”
আশার বিষয় হলো- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বেশ কিছু সচেতন প্রতিষ্ঠান এর শুদ্ধ উচ্চারণ ‘সাহরী’ ব্যবহার করছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত আটাশ খন্ডে রচিত ইসলামী বিশ^কোষ, দুই খন্ডে সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ^কোষ ও এক খন্ডে ইসলামী বিশ^কোষ পরিশিষ্টসহ সকল প্রকাশনায় সাহরী শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রতি ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার প্রায় সবগুলোতে সাহরী লেখা ও বলা হচ্ছে। যথা: চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এন টিভি, মোহনা টিভি, বাংলা ভিশন, চ্যানেল নাইন, বৈশাখী টিভি, জি টিভি, বিজয় টিভি, মাই টিভি, চ্যানেল টুয়েনটি ফোর, আর টিভি, চ্যানেল ফাইভ ইত্যাদি। এ বিষয়ে সকলের সতর্ক দৃষ্টি কাম্য।

 

সাওয়াল: রমজান মাস নাকি রমাদান মাস, এর সঠিক আরবী উচ্চারণ কি?


জওয়াব: রমজান নয় রমাদান।


ব্যাখ্যা: রমাদান শব্দটি আরবী। এর তৃতীয় বর্ণটি ‘দ-দ’। এটি মাখরাজ ও সিফাতে আরবী বর্ণ ‘য’ ও ‘দাল’ এর সাথে কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য রাখে। তবে ‘দাল’ হলো ১১ নং মাখরাজ এবং ‘য’ হলো ১৩ নং মাখরাজ; আর ‘দ-দ’ হলো ৭ নং মাখরাজ। যার স্থান হলো: জিহ্বার গোড়ার কিনারা, উপরের মাড়ীর দাঁতের গোড়া। আর ‘দাল’ ও ‘য’ এর উচ্চারণের স্থান হলো যথাক্রমে, জিহ্বার আগা সামনের উপরের দুই দাঁতের গোড়া ও আগা। সুতরাং ‘দ-দ’ এর উচ্চারণে জিহ্বা সামনে লাগব না। (লিসানুল আরব)। ফারসী ভাষায ৫টি হরফ একই রকম উচ্চারণ হয়। যথা: ‘জীম’, ‘যাল’, ‘ঝা’, ‘দ-দ’ (য-দ) ও ‘য’ = ‘জীম’ বা বর্গীয় ‘জ’। আরবী উচ্চারণে আরবদের অনুসরণ করা জরুরী। অনুরূপ বাংলা বাংলাভাসীদের মতো এবং ইংরেজী ইংরেজদের মতো হওয়া চাই। উর্দূ ফারসী হিন্দিও তাদের মতো হওয়া উচিৎ।


লেখক : চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশ, যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি এবং সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজম