টিপ পরায় ঢাকার তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তির হয়রানির ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)। সোমবার (৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন এ মন্তব্য করেন সংগঠনটির সদস্যরা। হয়রানিকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আলোচিত এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে এক পুলিশ কনস্টেবলকে চিহ্নিত করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। সোমবার (৪ এপ্রিল) সকালে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, তার নাম নাজমুল তারেক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কনস্টেবল নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, লতা সমাদ্দারকে টিপ পরার কারণে পুলিশের পোশাক পরা একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তির হয়রানির ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের নারী সমাজের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং হয়রানিকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
তারা আরো বলেন, আমরা লক্ষ করেছি, নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্নিত করতে ধর্ম ব্যবসায়ী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই গোষ্ঠী প্রায়ই নারীর পোশাক-আশাক নিয়ে জনসমক্ষে আপত্তিকর আচরণ করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংস ও যৌন আক্রমণ চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, হয়রানিকারী পুলিশ বাহিনীতে ওই গোষ্ঠীরই প্রতিনিধিত্ব করছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, কোনো নাগরিক বা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা যাতে আর না ঘটতে পারে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
রাজধানীর ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের পাশে শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে টিপ পরা অবস্থায় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির লাঞ্ছনার শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন প্রভাষক লতা সমাদ্দার। এ সময় গায়ের ওপর মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ তার।
এ বিষয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় অভিযোগ করেছেন ড. লতা সমাদ্দার। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শনিবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে রিকশায় করে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে কর্মস্থল তেজগাঁও কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। সেজান পয়েন্টের সামনে পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলের ওপর বসেছিলেন।
লতা সমাদ্দার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কপালে টিপ পরা নিয়ে ওই ব্যক্তি আমাকে কটূক্তি করেন। বলেন টিপ পরসোস ক্যান। একপর্যায়ে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পেছনে ফিরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় তিনি আরো গালিগালাজ করেন। পরে পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি আমার গায়ের ওপর মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরে গিয়ে রক্ষা পেলেও শারীরিকভাবে আহত হই।’
ট্রাফিক পুলিশকে বিষয়টি জানালেও ব্যবস্থা না নিয়ে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন বলে জানান প্রভাষক লতা সমাদ্দার।
বাংলাদেশ-ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নারীরা টিপ পরেন। বিশেষ করে বাঙালি নারীর সাজে টিপের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। কিন্তু টিপ পরা নিয়ে নারীকে প্রায় হেনস্তা হতে হয়। হতে হয় ইভটিজিংয়ের শিকার। যার সর্বশেষ শিকার ঢাকার তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। তিনি হেনস্তার শিকার হয়েছেন জনগণের রক্ষক বন্ধু হিসেবে খ্যাত পুলিশের কাছে। শনিবার ওই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
হেনস্থাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে দাবি জানান সংসদ সদস্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানিয়েছে অনেকেই। প্রতিবাদ স্বরূপ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।