logo
আপডেট : ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১১:১১
রংপুরবাসী পাচ্ছে সমন্বিত ক্যানসার-কিডনি-হৃদরোগ হাসপাতাল
শরিফুল ইসলাম, রংপুর

রংপুরবাসী পাচ্ছে সমন্বিত ক্যানসার-কিডনি-হৃদরোগ হাসপাতাল

রংপুর সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এবার রংপুরবাসী পাচ্ছেন সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল। ফলে বিভাগীয় শহর রংপুরেই বিশেষায়িত সেবা পাবেন আট জেলার ৫৮টি উপজেলার রোগীরা।

সম্প্রতি গত ৯ জানুয়ারি ভার্চুয়ালি এই সমন্বিত হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে এক দশমিক ২৫ একর জমির ওপর ৪৬০ শয্যার এই সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি বেজমেন্ট নির্মাণের কাজ চলছে। রংপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খন্দকার নিজেই বেজমেন্ট নির্মাণকাজ পরিদর্শন করছেন। সঙ্গে আছেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাকিউজ্জামান ও উপসহকারী প্রকৌশলী খায়রুল ইসলাম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড ঢাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তৎপর থেকে নির্মাণকাজ করছেন।

গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেন, ‘আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সর্বাধিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা মনিটরিং ও মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেছি। কাজের অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতি মাসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এই আটটি হাসপাতাল নির্মাণ শেষ হলে দেশের সকল জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসাব্যবস্থায় এক মাইলফলক স্থাপিত হবে।’

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৪৬০ শয্যার রংপুর সমন্বিত ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। হাসপাতাল নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে ৮৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২৮ ফিট মাটির গভীরে দুটি বেজমেন্টসহ ১৭ তলাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটির বৈশিষ্ট্য হলো- ১৩ হাজার ৩৪২ স্কয়ার ফিটের প্রথম ও দ্বিতীয় বেজমেন্টে থাকবে টেস্ট ল্যাব। যাতে করে কোনো রেডিয়েশন ছড়াতে না পারে। প্রথম তলার ১১ হাজার ১৩৬ স্কয়ার ফিট জায়গায় থাকবে স্টোর রুম, রোগীদের বসার স্থান, ক্যান্টিন, অফিস রুমসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। দ্বিতীয় তলায় ১৩ হাজার ৮২৬ স্কয়ার ফিট জায়গায় থাকবে চিকিৎসকদের চেম্বার।

তৃতীয় তলার ১৪ হাজার ৬৯৮ স্কয়ার ফিট জায়গাজুড়ে থাকবে চিকিৎসকদের সভাকক্ষ, ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসরুম, নার্সেস স্টেশন ও কেমোথেরাপির রুম। চতুর্থ তলার ১৪ হাজার ৭৪৪ স্কয়ার ফিট জায়গায় থাকবে ৫০ শয্যার পুরুষ ওয়ার্ড। পঞ্চম তলার ১৩ হাজার ৩৩৮ স্কয়ারফিট জায়গায় থাকবে ৫০ শয্যার মহিলা ওয়ার্ড। ষষ্ঠ তলার ১৩ হাজার ৩৩৮ স্কয়ার ফিট জায়গায় থাকছে প্রফেসর, মেডিকেল অফিসার, রেকর্ড রুম, কম্পিউটার রুম, রিসার্চ রুমসহ দাপ্তরিক কাজের স্থান।

সপ্তম থেকে ১৪ তলা পর্যন্ত ইনসারশন কক্ষ, মিনি ওটি, রোগী নিবন্ধন কর্নার, মোল্ড রুম, ইমার্জেন্সি, ওপিডি, ওয়েটিং রুম, তথ্যকেন্দ্র, সাক্ষাৎ রুম, ক্যানসার স্কিনিং রুম, ফলোআপ রুম, রিমার্কি রুম, ড্রাগ, ফিজিশিস্ট ও টেকনোলজি রুম, রেডিও থেরাপি টেকনোলজিস্ট রুম ছাড়া আরো কি কি থাকবে তা স্থাপত্য বিভাগ নির্ধারণ করবে।

তবে হাসপাতালটি ঘিরে অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ছয়টি লিফট, রোগীদের বহনের জন্য দুই হাজার কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বেড লিফট। সড়ক, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন, ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ ট্যাংক, ফুটপাত, ড্রেন, পাম্প হাউস, বৃষ্টির পানিধারণের জন্য অত্যাধুনিক ট্যাংক, বৃক্ষরোপণ, ইন্টারকম সিস্টেম, এক হাজার ১০০ কেভি ট্রান্সফরমার স্থাপন, এইচটিএলটি ক্যাবলসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন। সব মিলিয়ে খরচ হবে ১৬০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হবে।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়ে রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার রংপুর উন্নয়নে আন্তরিক ছিল না। তবে বিশ^বিদ্যালয়, বিভাগ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, দৃষ্টিনন্দন পুলিশ লাইন্স, সিভিল সার্জন অফিসসহ অনেক দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন উন্নয়নের পক্ষে ভোটের গণরায় দেওয়া সময়ের দাবি। আমি বিশ্বাস করি, রংপুরবাসী আসন্ন রংপুর সিটি নির্বাচনে তারই প্রতিফলন ঘটাবেন। রংপুর উন্নয়নের জন্য আমরা রংপুরবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।’

রংপুর গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাকিউজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঘাম ঝরানো শ্রম দিতে হচ্ছে। নির্মাণকাজের গতি আছে। এভাবে চললে আগামী দুই বছরের মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারব।’

রংপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খন্দকার বলেন, ‘এটি একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ। আমি নিজেই অফিসে সময় দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পটি দেখভাল করছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো ক্যানসার চিকিৎসায় বৈদেশিকনির্ভরতা কমিয়ে আনাসহ দেশে ক্যানসার চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। এই হাসপাতালে সূচনাতেই ক্যানসার রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।’