logo
আপডেট : ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১২:১৮
সাতক্ষীরায় বেড়েছে লবণসহিষ্ণু আখের চাষ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় বেড়েছে লবণসহিষ্ণু আখের চাষ

জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে

সাতক্ষীরা জেলায় আখ উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে জেলায় লবণসহিষ্ণু জাতের আখচাষ বাড়ছে।
গতকাল রোববার জেলার তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মূলত এক যুগ আগেও সাতক্ষীরা জেলার তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক জাতের আখের চাষ হতো। এ অঞ্চলে কোনো চিনিকল না থাকায় সেই আখ দিয়ে তৈরি হতো গুড় ও পাটালি। হাটবাজারে তা বিক্রিও হতো। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও বাজারদর পড়ে যাওয়ায় ২০০৯ সালের পর থেকে হঠাৎ করে সাতক্ষীরা জেলায় কমতে থাকে আখচাষ।

এ ছাড়া আখচাষ কমার পেছনে কৃষি জমিতে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ আরো নানা কারণ ছিল।
তবে সম্প্রতি সাদা চিনির বিকল্প হিসেবে আখের চিনি ও গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধিতে নতুন করে জেলায় আখচাষ বাড়ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।

আর কৃষকরা বলছেন, উৎপাদিত আখ চিনিকলে বিক্রি করতে পারলে তারা আরো লাভবান হবেন। তা হলে আখচাষ আরো বাড়বে।

তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের কৃষক আকাবার আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মাটি ও আবহাওয়া আখচাষের উপযোগী। আগে আমাদের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে আখের চাষ হতো। কিন্তু পলি জমে ভরাট হওয়া কপোতাক্ষ নদী দিয়ে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় বিলগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হতো। সে সময় শত শত কৃষকের মাঠের আখ ও বিজ নষ্ট হয়ে যেত। তখন বছরের প্রায় ছয় মাস জলাবদ্ধতা থাকত। এখন কপোতাক্ষ নদী খনন করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা কমেছে। কিন্তু আগের মতো আর আখের চাষ হচ্ছে না। তবে বাজারে আখের গুড়ের চাহিদা বাড়ায় নতুন করে অনেকে আখচাষ শুরু করেছেন।’

তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের আখচাষি লিটন হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে লতাজাবা, কাঁটোরা, লোহারডান্ডি জাতের আখচাষ বেশি হয়। তবে এখন কেউ কেউ কুশোরি জাতের আখও চাষ করছেন। সম্প্রতি এখানে লবণসহিষ্ণু কিছু জাতের আখের চাষ করে সফলতা মিলেছে।’

দেবহাটা উপজেলার হাদিপুর গ্রামের কৃষক খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমাদের গ্রামে শুধু চিনিচাপা জাতের আখ চাষ হতো। এই আখ মূলত চিবিয়ে ও রস করে খাওয়া হয়। এখন জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় আখের চাষ কমে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি পাবনা আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের লবণসহিষ্ণু ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখচাষ করা হচ্ছে। এ জাতের আখচাষে কৃষকরা ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন।’

একই এলাকার আখচাষি জামাল উদ্দীন বলেন, ‘আখ চাষে বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। শুধু আখ বিক্রি করে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। তবে চিনিকলগুলোয় সরাসরি আখ বিক্রি করতে পারলে আমাদের লাভ আরো বেশি হতো।’

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা অঞ্চলে আখ উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে জেলায় আখের চাষ বেড়েছে। জেলায় গত বছর ১৫০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছিল। এ বছর প্রায় ১৭০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে।