logo
আপডেট : ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১২:৩৩
ক্ষতির মুখে সুবর্ণচরের তরমুজচাষিরা
মিজানুর রহমান, নোয়াখালী

ক্ষতির মুখে সুবর্ণচরের তরমুজচাষিরা

নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তরমুজ

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তরমুজের চাহিদার বেশিরভাগই মেটানো হয় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তরমুজ দিয়ে। কিন্তু চলতি বছরে তরমুজের ফলনে এসেছে বিপর্যয়। শুরুর দিকে ভালো ফলনে কৃষকদের মনে বড় আশার আলো জ্বলে উঠলেও শেষের দিকে এসে তা হতাশায় পরিণত হয়েছে।

চলতি মৌসুমে বৃষ্টি, খরা আর ভাইরাসের কারণে তরমুজের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের তরমুজচাষিরা।

আকারে বড় আর মিষ্টি স্বাদের জন্য খ্যাতি আছে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তরমুজের। গত দেড় দশকেরও বেশি সময় এই ফলের চাষ করে আসছে জেলার সুবর্ণচরসহ আশপাশের কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলার কৃষকরা।

কিন্তু গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিরিক্ত খরাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব উপজেলায় তরমুজের ফলনে নানা বিপর্যয় নেমে এসছে। তার ওপর আবার তরমুজের আকার ছোট হতে শুরু কেেরছ। আর চলতি মৌসুমে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

যেখানে স্বাভাবিকভাবে একটি তরমুজের ওজন ৯-১০ কেজি বা তারও বেশি ওজন হতো। বর্তমানে সেখানে একটি জমির বেশিরভাগ তরমুজের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ কেজির বেশি হচ্ছে না।

এক একর জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয় প্রায় ৭৫-৮০ হাজার টাকা। কিন্তু তরমুজের আকার ছোট ও ভাইরাসের কারণে তরমুজ পচে যাওয়ায় এক একর জমিতে যে ফলন হয়েছে তা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না অনেক কৃষক। যার ফলে তরমুজ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা।

সরেজমিনে সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক, চরওয়াপদা, চর আমানউল্যা, চরজুবলীসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে তরমুজের আবাদ হওয়া ক্ষেতগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেতে তরমুজের ফলন অনেকটা ছোট আকারের। শুরুতে কৃষকরা যেভাবে আশা করেছিলেন ফলন বড় হবে, কিন্তু এখন শেষপর্যায়ে এসে দেখেন আশানুরূপ তরমুজের আকার হয়নি।

এ নিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন তরমুজচাষির সঙ্গে। তারা জানান, ভালো দামের আশায় আগেভাগে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে খরচ অনুপাতে বাজারে কম দামে তরমুজ বিক্রি করে ফেলছেন। যে পরিমাণ জমিতে খরচ হয়েছে, তা উঠে আসছে না।

তাদের আশা, যে তরমজু ক্ষেতে রয়েছে রমজানে তারা ভালোভাবে বিক্রি করতে পারলে ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবেন।

কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, ‘তরমুজ চাষে প্রথম দিকে আবহাওয়ার কারণে কিছু কৃষকের ক্ষতি হলেও বর্তমানে তারা তা বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন। বাজারে বর্তমানে তরমুজের চাহিদা আছে। আবার অনেক কৃষক ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে তরমুজ বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন।’

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সুবর্ণচরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় চার হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজের চাষাবাদ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সমস্যায় কিছু কিছু এলাকার তরমুজের ফলন কম হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবসময় কৃষকদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি।’