সাওয়াল: রোজা অবস্থায় ইনজেকশন ও ইনসুলিন নেওয়া এবং রক্ত দেওয়া যাবে কি?
জওয়াব: রোজা অবস্তায় দিনের বেলায় জরুরী প্রয়োজনে ইনজেকশন ও ইনসুলিন নেওয়া যাবে। এতে রোজার ক্ষতি হবে না। কারণ এতে খাদ্য গ্রহণের যে উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ করা ও শক্তি অর্জন করা, তা অর্জিত হয় না। তবে এমন কোনো ইনজেকশন নেওয়া যাবে না, যার দ্বারা খাদ্য গ্রহণের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন হয়; বরং এমন অসুস্থ অবস্থায় রোজা ছেড়ে দেওয়ারও অনুমতি রয়েছে। যা পরে কাযা আদায় করে নিতে হবে। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। রোজা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া যাবে; তবে লক্ষ রাখতে হবে এতে করে যেনো রোজাদারের রোজা ভঙ্গের উপক্রম না হয়। অনুরূপভাবে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত নিলেও রোজা ভঙ্গ হবে না। (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাততুহু; ফাতাওয়ায়ে জামেয়া)।
সাওয়াল: রোজা অবস্থায় ভুলক্রমে পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে কি-না?
জওয়াব: রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় ভুলক্রমে (রোজার কথা ভুলে গিয়ে) পানাহার বা রতিক্রিয়া করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না; কাযা বা কাফফারা কিছুই লাগবে না। কারণ অনিচ্ছাকৃত ভুল আল্লাহ মাফ করবেন। তবে রোজার কথা মনে হওয়ার সাথে সাথেই তা বন্ধ করে দিতে হবে। মনে হওয়ার পর খেলে রোজা ভঙ্গ হবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হবে। যেহেতু মনে হওয়ার পর ইচ্ছা করে করা হয়েছে; যা রোজা ভঙ্গের কারণ। আর ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গ করলে, তার কাযা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হয়। কাযা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি আর কাফফারা হলো ষাটটি; সুতরাং একটি রোজার কাযা ও কাফফারা মিলে মোট একষট্টিটি রোজা। (দুররুল মুখতার- রদ্দুল মুহতার)।
সাওয়াল: রোজা অবস্থায় স্বপ্নে পানাহার করা ও স্বপ্নদোষ হওয়া দ্বারা রোজার ক্ষতি হবে কি?
জওয়াব: রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় পানাহার করতে স্বপ্নে দেখলে বা স্বপ্নদোষ হলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ এটি ইচ্ছাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আর স্বপ্নে পানাহার দ্বারা প্রকৃত পানাহার হয় না এবং ক্ষুধা নিবারণ ও শারীরিক শক্তি অর্জনও হয় না; তাই এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। এমন কি রোজা হালকাও হবে না, সওয়াব ও কমবে না। স্বাভাবিকভাবেই রোজা সম্পূর্ণ করবে। কাযা বা কাফফারা কিছুই লাগবে না। সজ্ঞান রতিক্রিয়ায় রোজা ভঙ্গ হয়। ইচ্ছাকৃত হলে কাযা ও কাফফারা রউভয় আদায় করতে হয়: আর অনিচ্ছায় হলে শুধু কাযা আদায় করতে হয়। স্বপ্ন যেহেতু স্বেচ্ছায় নয় ও সজ্ঞান নয়; তাই রোজা অবস্থায় রাতে বা দিনে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙ্গবে না; স্বাভাবিক ভাবেই রোজা পূর্ণ করবে। কাযা কাফফারা কিছুই প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজন মতো অজু গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করে নামাজ আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী)।
লেখক: বাংলাদেশ ইসলামিক স্কলার্স ফোরামের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব এবং আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজমের সহকারী অধ্যাপক