logo
আপডেট : ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:৪৩
টিপু হত্যাকাণ্ড
ঘটনাস্থলে ছিল একাধিক কিলার
এমদাদুল হক খান

ঘটনাস্থলে ছিল একাধিক কিলার

প্রায় এক দশক আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু।

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল একাধিক পেশাদার কিলার। একজন ব্যর্থ হলে ব্যাকআপ হিসেবে প্রস্তুত ছিল আরেক জন। ডিবি পুলিশের কাছে মাসুম আহম্মেদ আকাশ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছেন গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে মতিঝিলকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৭৫ জনকে ডিবি এবং র‌্যাব কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তবে ঘটনার ১২ দিন পার হলেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার এবং শুটার মাসুমের সহযোগী মোটরসাইকেল চালককে শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ বলছে, টিপুকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং মাসুমের সহযোগীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গত ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ব্যস্ত সড়কে গুলি করে জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। তখন দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় ডিবি সন্দেহভাজন হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আরফান উল্লাহকে গ্রেপ্তার ও একটি অস্ত্র উদ্ধার করে। অস্ত্র মামলায় এক দিনের রিমান্ড শেষে রোববার আরফানকে আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন আদালত নতুন করে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ঘটনাস্থলেই জব্দকৃত আলামত উদ্ধার, সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার, ভুক্তভোগীর পরিবারের বক্তব্য এবং প্রথাগত সোর্সের মাধ্যমে পুলিশ ও র‌্যাব এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে র‌্যাব স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে।

ঘটনার দুইদিন পর বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাসুম নামে এক যুবককে ঢাকা মহানগর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ডিবি জানিয়েছে, মাসুম টিপু হত্যার মূল শুটার। মাসুমের বাড়ি ঢাকার পশ্চিম মাদারটেক এলাকায়।

অন্যদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী এবং কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছিল। তবে ঘটনাস্থলে কে শুটার ছিল তা তারা র‌্যাবকে নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য র‌্যাব মূল শুটার কে তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সস্ত্রাসী জিসান। তাকে সহযোগিতা করেছে এবং কিলার ভাড়া করেছে মূসা। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগেই দুবাই পালিয়ে যায় মূসা। যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মাঠে থেকে হত্যাকাণ্ডের মিশন সম্পন্ন করেছে। মূসাকে ধরতে পারলেই ঘটনাস্থলে টিপুকে কে সরাসরি হত্যা করেছে তা জানা যাবে। তাকে দুবাই থেকে দেশে কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মূসাকে ধরা গেলেই জানা যাবে যে সে কাকে শুটার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে একজন। আর ব্যাকটিমে ছিলো অন্তত ৬ জন। মোটরসাইকেল ছিল মোট ২টি। শুটার কিলিং মিশন সম্পন্ন করে একটি মোটরসাইকেলে উঠে কিছুদূর যাওয়ার পর আরেক মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, শুরু থেকে নাসির রেকি করছিল। টিপুর গাড়ি যখন দুই রাস্তার মোড় অতিক্রম করছিল, তখন তাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখা যায়।

সূত্র যায়, এ ঘটনায় শুটার মাসুমকে ধরার পর সে আসল শুটার কী-না তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয় গোয়েন্দাদের মধ্যে। পরে র‌্যাব মূল পরিকল্পনাকারী ৪ জনকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যে, কিলিং মিশনের স্পটে দায়িত্বে কে ছিল? তারা এর কোনো উত্তর দিতে পারেনি। অথচ তারাই শাহজাহানপুর এলাকায় টিপু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাসহ স্পটে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে।

সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের পর জিসান গ্রুপের শুটার জসিমকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার এখনো হদিস পাওয়া যায়নি।