logo
আপডেট : ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:২২
গ্যাস সংকটে দাম বাড়ল ইফতার সামগ্রীর
ইফ্ফাত শরীফ

গ্যাস সংকটে দাম বাড়ল ইফতার সামগ্রীর

রাজধানীর বেইলি রোডে সোমবার একটি ইফতারির দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি- ভোরের আকাশ

রমজানের শুরুতেই রাজধানীর অনেক জায়গায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে অনেকেই বাসায় সেহেরি এবং ইফতার সামগ্রী বানাতে পারছে না। যে কারণে বাজারের ইফতারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বেশিরভাগ রোজাদারকে। রমজানের দ্বিতীয় দিনে অনেককেই বাজারে এসে ইফতার সামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। ইফতার কিনতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়ছেন অনেক ক্রেতা। কারণ বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। ফলে যতটুকু মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজন তা না কিনে সামান্য পরিমাণ কিনে বাসায় ফিরেছেন অনেকেই। যার ফলে বিক্রিতেও কিছুটা ভাটা দেখা গেছে। তবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারি কিনতে এখনো ভিড়।

চকবাজারের একাধিক ইফতারি বিক্রেতা ভোরের আকাশকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে এখন আগের থেকে ইফতারির দামও বেড়েছে। দুই বছর আগেও পুরান ঢাকার ইফতারির বাজারের যে জৌলুস ছিল, সেটি এখন নেই। দাম বেশি থাকায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আগের মতো ইফতারি কিনতে তেমনটা আসছে না।’ তবু এবার বসতে পেরে খুশি বলে জানান বিক্রেতারা।

সরেজমিন পুরান ঢাকার চকবাজারে দেখা যায়, ইফতারি পসরা সাজিয়ে দুপুর থেকেই হাঁকডাক করছে বিক্রেতারা। অন্যবারের তুলনায় এবার চকবাজারে দোকানের সংখ্যা অনেকটাই কম। যার জন্য পুরনো অনেক দোকান বসতে দেখা যায়নি।

চকবাজারের এই ইফতারির ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। ঢাকার খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে চকের ইফতারির বাজার অনন্য উপাদান হিসেবে জুড়ে আছে। চকের ইফতারির খ্যাতি তার বহু ধরনের কাবাব ও গোশতের পদগুলোর জন্য। লম্বা শিকের সঙ্গে সুতা দিয়ে বিশেষ কায়দায় পেঁচিয়ে তৈরি করা সুতি কাবাব তো ইফতারিতে খুবই জনপ্রিয়। মুড়ি, ঘুগনি, ছোলা প্রভৃতির সঙ্গে সুতি কাবাব যোগ করে একত্রে মাখিয়ে খাওয়া হয়। এ ছাড়া কাবাবের মধ্যে আছে শিক, শামি, রেশমি, জালি, বটি, খিরি, গুর্দা, টেংরি, হান্ডি এসব। আরো আছে আস্ত মুরগি, কোয়েল ও কবুতরের রোস্ট, রেজালা, চাপ ইত্যাদি। তবে দাম বেশ চড়া। চকের ইফতারির বাজার তার আগের রূপে ফিরে এলেও খাবারের দাম আর আগের মতো থাকেনি। ক্রেতারা বলছেন দাম খুব চড়া। একই সঙ্গে বিক্রেতাদেরও একই কথা। তেল, মসলা, গোশত, চিনি, সবজি সবকিছুরই দাম লাগামছাড়া। কাজেই ইফতারির দাম না বাড়িয়ে তাদের উপায় কি?

পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা সিফান সিয়াম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমি পুরান ঢাকারই একজন ব্যবসায়ী। গ্যাস না থাকায় রমজানে এখান থেকেই টুকটাক ইফতার বাসার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। তবে আগের থেকে সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। আগে যে পরোটার দাম ২০ টাকা ছিল, এখন সেটি নিতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা লাগছে। আর সমুচা ২০ টাকা থেকে এবার ৪০ টাকা চাচ্ছে। এই রকম দাম হলে মধ্যবিত্তরা তো আর চকবাজারের ইফতারি ক্রয় করতে পারবে না।’

অ্যাপেল কনফেকশনারির মেনেজার মো. কাউসার বলেন, রমজান মাসে তারা সাধারণত দাম বাড়ান না। কিন্তু এবার যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাই কিছু কিছু খাবারের দাম বাড়াতে হয়েছে। পেঁয়াজু, বেগুনি, পাকোড়া এসব আগের মতোই প্রতিটি ৫ টাকা করে। তবে আকার একটু ছোট হয়েছে। ডিমের চপ গত বছর ছিল ৩০ টাকা, এবার ৪০ টাকা। মাংসের দাম বেশি থাকায় আইটেমগুলোর মূল্য চড়া।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাহারি ইফতারের মধ্যে গরুর সুতি কাবাব কেজি প্রতি ১ হাজার টাকা, খাসির সুতি কাবাব ১২শ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, বড় বাপের পোলায় খায় ৬০০ টাকা কেজি, ছোলা-ঘুঘনি ২৮০ টাকা কেজি, পেশতা রুটি ৭০ টাকা পিস, শাহী পরটা ৩০ থেক ৬০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৩৫০, ফালুদা ছোট বক্স ১০০, বড় বক্স ২০০, দইবড়া ২০০ থেকে ৪৪০ টাকা কেজি, রেশমি জিলাপি ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি ২০০ টাকা কেজি।

সদরঘাট থেকে আসা সজল বলেন, ‘রমজানের ইফতার মানে চকবাজারের ইফতারি। করোনার কারণে দুই বছর আসতে পারিনি। তাই এ বছর চলে এসেছি। পরিবারসহ একসঙ্গে ইফতার করব। খাসি ও মুরগির ঝাল ফ্রাই, বড় বাপের পোলায় খায়, ছোলা, দইবড়াসহ অনেক কিছু নিয়েছি।’

ইফতারির দোকান নিয়ে বসেছেন মো. খোকন। নয় বছর ধরে প্রতি রমজানে ইফতারির ব্যবসা করছেন। তার দোকানে রয়েছে কবুতর, কোয়েল, মুরগির রোস্ট আর কয়েক পদের নানরুটি।