logo
আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২২ ০১:০৫
ডায়রিয়া প্রতিরোধে যেসব সতর্কতা নেবেন
পুষ্টিবিদ মুনিয়া মৌরিন মুমু

ডায়রিয়া প্রতিরোধে যেসব সতর্কতা নেবেন

ডায়ারিয়ার প্রাদুর্ভাবে প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা

তীব্র গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আবার এই সময়টিতে পালন করছেন রমজান মাস। সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থেকে খুব সহজেই তাই অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; যদি কিনা খাবার গ্রহণের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা না হয়।


তার ওপর বিগত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে ভয়াবহ রকমে। বলা হচ্ছে, এ বছর ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও আগের যে কোনো বছরের চাইতে অনেক বেশি। ঢাকায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

প্রাপ্তবয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, পাশাপাশি শিশু এবং বৃদ্ধ ব্যক্তিদেরও আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। ডায়রিয়ার সঙ্গে তীব্র পানিশূন্যতায়ও ভুগতে দেখা যাচ্ছে রোগীদের। এমন অবস্থা মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বনের পূর্বে জানা প্রয়োজন ডায়রিয়ার প্রকোপ কেন বাড়ছে সে বিষয়ে।

 

ডায়রিয়া বৃদ্ধির কারণ

একজন ব্যক্তির ডায়রিয়া হলে সাধারণত তিনবারের অধিক পায়খানা হতে দেখা যায়। পাশাপাশি বমি, পেটে ব্যথা, অনেকের ক্ষেত্রে আবার জ্বর এবং মাথাব্যথাও থাকে ডায়রিয়া হলে। ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে বিশেষ করে--


☑️ জীবাণুর সংক্রমণে, ভাইরাসজনিত কারণে যেমন- রোটা ভাইরাস, এস্ট্রো ভাইরাস, এডেনোভাইরাস ইত্যাদি এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে। যেমন- সালমোনেলা, শিগেলা, ই কলাই, ভিব্রিও কলেরি, ক্যামপাইলোব্যাকটর ইত্যাদি।


এসব জীবাণু, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়। বিশেষ করে খাবারের মাধ্যমে ছড়ায় খুব সহজেই। এছাড়া পার্সোনাল হাইজিন মেনে না চললেও ডায়রিয়ায় সংক্রমিত হতে দেখা যায়।
আমাদের দেশে তীব্র গরমে যে কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

 

অবিশুদ্ধ এবং দূষিত পানি : দূষিত পানির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে, যা খালি চোখে আমরা দেখতে পাই না। পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পান না করলে ডায়রিয়া হতে পারে। রাস্তার ধারে বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর পানীয় পাওয়া যায়। তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই এই পানীয় পান করেন না বুঝেই। এ গরমে এসব পানীয়তে সহজেই ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। ফলে এ ধরনের দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া রোগের সৃষ্টি হয়।

 

অনিরাপদ এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার : স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সব খাবারই অনিরাপদ। গরমে অত্যধিক তাপমাত্রায় খাবার সহজেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং খাবার অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। অনেকে এই বাসি-পচা খাবার গ্রহণ করার ফলে ডায়রিয়াতে ভুগছেন। রমজানে অনেকেই খাবার সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করছেন না। ফলে খাবার গ্রহণের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

 

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে না চললে বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুবই বেশি। এছাড়া স্যাঁতসেঁতে বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা থাকে।

 

ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়


ডায়রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে রোগীদের তীব্র পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে, যা তাদের স্বাস্থ্যেও ওপর খুবই মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অসুস্থতার ক্ষেত্রে প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ যেহেতু সহজ- তাই কয়েকটি বিষয় মেনে চললেই ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।


☑️ পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। বাইরে বের হলে সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরনের রঙিন অস্বাস্থ্যকর পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।


☑️ একটি নির্দিষ্ট সময় পরে যে খাবার গ্রহণ করা যাবে না এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যদি একই খাবার পরবর্তীতে খেতেই হয়; তা হলে খাবার সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে এবং খাওয়ার সময় তাপমাত্রা ঠিক রেখে গরম করে খেতে হবে। খাবার ঢেকে সংরক্ষণ করতে হবে।


☑️ রাস্তার পাশের বিভিন্ন ধরনের মসলাদার ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করে চলতে হবে। এমনকি বাইরের খোলা খাবার গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকবেন।


☑️ বাইরে থেকে কাঁচা শাকসবজি আনার পর সঠিকভাবে ধুয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। যেমন চলমান পানির নিচে কচলিয়ে শাকসবজি পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করা।


☑️ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন করতে হবে। যে কোনো ধরনের বাহকের সংস্পর্শে এলে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিবেন। আপনার সদিচ্ছা এবং একটুখানি সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে ডায়রিয়া রোগের মতন অনাকাক্সিক্ষত রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমানো সম্ভব সহজেই।