logo
আপডেট : ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:৪২
রাবি শিক্ষক তাহের হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট সহকর্মীরা
রাজশাহী ব্যুরো

রাবি শিক্ষক তাহের হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট সহকর্মীরা

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুইজন হলেন- জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের নিকট আত্মীয় আব্দুস সালাম।

আপিল বিভাগের এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মীরা। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মীরা বলছেন, এই রায়ের মাধ্যমে আবারো সত্যের জয় হলো।

এ বিষয়ে অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘১৬ বছর পরে আমরা যে রায় পেলাম, সেই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। অধ্যাপক তাহের ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ, অসাম্প্রদায়িক মানুষ।’

তাঁকে হত্যা করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল, খুনের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল, এই রায়ের মাধ্যমে আমরা আশা করব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরকম কোনো পরিবেশ আর তৈরি হবে না। আমরা হয়তো তাহের স্যারকে ফিরে পাব না, কিন্তু এই ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তাঁর আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে’, বলেন অধ্যাপক গোলাম সাব্বির।

অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তাহের স্যার সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের সমাজে একটা মেসেজ গেল, কেউ অন্যায় করে, খুন করে, পার পাবে না।

আরও পড়ুন: রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা: দুজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের যাবজ্জীবন বহাল

‘সত্যের একদিন না একদিন জয় হবেই। আমরা চাই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আর কোনো সময় যেন না ঘটে। আর কোনো প্রাণ যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে না যায়। এটা একটা পবিত্র অঙ্গন। আমরা চাই সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হোক। মানুষ সকল ধরনের হিংসা ও খুনের মতো অন্যায়, জঘন্য কাজ থেকে দূরে থাক’, যোগ করেন সুলতান উল ইসলাম।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।

এই হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুই জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।

আরও পড়ুন: রায় কার্যকর হলেই সন্তুষ্ট হবো: নিহত অধ্যাপক তাহেরের পরিবার

শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোট।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো.জাহাঙ্গীর আলম।

ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন- জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের আত্মীয় আব্দুস সালাম। এরপর তারা আপিল বিভাগে আপিল করেন।