টিপকাণ্ড নিয়ে যখন দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে তখন নারায়ণগঞ্জে পুলিশের একজন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই এক নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্লীলতাহানির শিকার ওই নারী সদর উপজেলার দেলপাড়া এলাকার বাসিন্দা। অভিযুক্ত ব্যক্তি আহাদ কোর্ট পুলিশের কনস্টেবল।
এদিকে এ ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত ওই পুলিশ কনস্টেবল ডিউটি রেখেই আদালত পাড়া থেকে পালিয়ে যান। ডিউটি রেখে চলে যাওয়ার ব্যাপারে অভিযুক্ত আহাদ তার ঊর্ধ্বতন কাউকে কিছুই জানাননি বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী ভোরের আকাশকে জানান, তার ছোট বোন জামাই মামুন গাড়ি চালক। একটি সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন তিনি। আজ ওই মামলার শুনানি ছিল। বোন জামাইকে দেখতে তিনিসহ তার আরও দুই বোন আদালতে আসেন। গারদ থেকে বের করে আনার সময় তারা তিন বোন আসামির সঙ্গে হাঁটছিলেন।
‘এ সময় পুলিশ কনস্টেবল আহাদ তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে একাধিকবার হাত দেন। প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও আটক করার হুমকি দেন কনস্টেবল আহাদ। পরে তার ছোট বোনের সঙ্গেও একই কাজ করেন ওই কনস্টেবল। এ সময় তারা চিৎকার করে প্রতিবাদ করলে আইনজীবীরা এগিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল আহাদ পালিয়ে যান’, বলেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী সুমন মিয়া ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমিসহ আইনজীবী মাসুদ উর রউফ, মৃণাল কান্তি বাপ্পি ও বাদল পোদ্দার স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) অফিস কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এমন সময় চিৎকার শুনে একটু এগিয়ে গেলে একজন পুলিশ কনস্টেবল আমাদের চারজনের মাঝ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে ভুক্তভোগী নারী ঘটনার বিস্তারিত আমাদেরকে খুলে বলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ওই নারীর আত্মীয় মামুন ফতুল্লা থানার একটি মামলায় জেলা কারাগারে রয়েছেন। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি ছিল। গারদখানা থেকে পুলিশ প্রহরায় আসামিকে জেলা জজ আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই নারী আসামির সঙ্গে হাঁটতে থাকেন। এমন সময় কনস্টেবল আহাদ ওই নারীর স্পর্শকাতর স্থানে একাধিক বার হাত দেন। এক পর্যায়ে ওই নারী চেঁচিয়ে বলতে থাকেন ‘আমরা কী মানুষ না?’
আইনজীবী মাসুদ উর রউফ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘কেউ আমার কাছে অভিযোগ দেয়নি। আমি কোর্টে যাওয়ার সময় অনেক হইচই শুনে লোক পাঠালে জানতে পারি আসামির আত্মীয়ের সঙ্গে পুলিশের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। তাড়া থাকাতে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারিনি। তবে, শ্লীলতাহানির এমন কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।’
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) আসাদুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনার অভিযোগ আমরা পাইনি। এমনকি এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও শুনিনি। তবে, এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল আহাদ মুঠোফোনে বলেন, ‘দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের ট্রেনে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি আমি। এখন কিছু বলতে পারব না আমি।’
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) আসাদুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘কনস্টেবল আহাদ ডিউটিতে ছিলেন। তিনি রাজশাহীতে যাবেন কেন? যেখানেই যাক তাকে আসতে হবে।’