logo
আপডেট : ৫ এপ্রিল, ২০২২ ২৩:০০
শ্রীলঙ্কায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল ক্ষমতাসীন জোট

শ্রীলঙ্কায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল ক্ষমতাসীন জোট

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে

চরম অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গণঅসন্তোষের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন জোটেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন জোট।

শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি), শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) ও সিলোন ওয়ার্কার্স কংগ্রেসের (সিডব্লিউসি) ৪২ জন আইনপ্রণেতা গতকাল মঙ্গলবার অধিবেশনে জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট সর্বদলীয় সরকার গঠনের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাও প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী দলগুলো। তারাও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। খবর: বিবিসি ও এনডিটিভির।

প্রেসিডেন্টের বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন এসএলপিপির সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টিও এত দিন সরকারে ছিল।

দলটির নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা গতকাল রাজাপাকসের জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমাদের দল জনগণের পক্ষেই থাকবে। জোট থেকে দলগুলো বেরিয়ে যাওয়ার ফলে রাজপাকসে এখন সংখ্যালঘু সরকারে পরিণত হয়েছে। ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য অন্তত ১১৩টি আসন থাকতে হয়। জোটের সমর্থন হারানোয় পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নেওয়া রাজাপাকসের জন্য আরো কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও স্বতন্ত্র সদস্যরা এখনো সরকারের প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।

বিরোধী দল এবং এমনকি ক্ষমতাসীন জোটের এমপিরাও অনেকে সর্বদলীয় সরকারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে পার্লামেন্টে শক্তি পরীক্ষার মঞ্চ তৈরি করেছেন। পার্লামেন্টের পরিবর্তনের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ আইনজীবী লুই নিরঞ্জন গণেনাথন বলেন, দেখুন- সংসদের পুরো কাঠামো বদলে গেছে। চলমান অস্থিরতার মধ্যে মন্ত্রিসভায় ভাঙন ও অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসের পদত্যাগের পর সোমবার আলি সাবরিকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু শপথ নেওয়ার পরদিনই (মঙ্গলবার) পদত্যাগ করেছেন সাবরি। এর আগে গত রোববার শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন।

এদিকে অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, রাজাপাকসে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা থামবেন না। বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশটির মানুষের মধ্যে এখন শুধু রাগ ও হতাশার বুদ্বুদ।

আর্থিক দুর্দশার প্রতিবাদে রাস্তায় নামা মানুষের স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডগুলোর বেশির ভাগেই লেখা রয়েছে- গোতা চলে যাও, গোতা চলে যাও। দেশটির চরম দুরবস্থার জন্য বেশির ভাগ মানুষই গোতাবায়াকে দায়ী করছেন। আর্থিক দুর্দশার কারণে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর প্রথমে জরুরি অবস্থা ও পরে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সোমবার স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাধিয়ে ওয়ানদুর্গালা বলেন, তাকে পদত্যাগ করতেই হবে। সে আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে।

তবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মঙ্গলবার তার দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তবে কোনো দল যদি পার্লামেন্টে ১১৩ আসনের সমর্থন দেখিয়ে নিজেদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারে তাহলে তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে তিনি প্রস্তুত।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তলানিতে নেমে গেছে। মারাত্মক ওষুধ সংকটের কারণে গতকাল থেকে দেশটিতে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়েছে।

চলতি বছর কলম্বোকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অথচ জ্বালানি তেল, খাদ্য, কাগজের মতো নিত্যপণ্য আমদানির মতো যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা সরকারের কাছে নেই। জ্বালানির অভাবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে চরম বিদ্যুৎ সংকট। পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জলাধারের পানি বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে যাওয়ায় সেখানেও উৎপাদন সংকট দেখা দিয়েছে। দিনে ১০-১২ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। বন্ধ রাখতে হচ্ছে সড়কবাতি।

শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ বেশি। খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশে পৌঁছেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে খাদ্য ও ওষুধের দাম হু হু করে বাড়ছে। ফুরিয়ে আসছে এসব পণ্যের মজুত। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, দুধ কিনতে মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। গত মাসে জ্বালানি তেল সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার সময় দুজনের মৃত্যুর খবরও এসেছে।

দেশটিতে যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে তা এখন রূপ নিয়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে। কলম্বোর ৫৪ বছর বয়সি স্কুলভ্যান ড্রাইভার উপলি করুণাতিলক বলেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্যাস ও দুধের গুঁড়া পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ছোট শিশুরাও বলছে, প্রেসিডেন্টকে সরে যেতে হবে।