সিয়াম সাধনার এ রমজান মাস আসে মানুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে। রাসুল (সা.) বলেন, রমজান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (নাসায়ি, আল মুসতাদরাক) এই মাস মুমিনের পুরোনো গুনাগুলোকে মুছে দেয়। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াব অর্জনের নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে (বোখারি ও মুসলিম)। রমজান মাস সহানুভূতির মাস। রমজান মাস এলে রাসূল (সা.) দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি দান-সদকা করতে উৎসাহিত করেছেন।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) অতিদানশীল ছিলেন। বিশেষ করে রমজান মাস এলে তিনি দান করা বাড়িয়ে দিতেন (বুখারি ও মুসলিম)। রমজানে রোজাদারকে ইফতার করালে অনেক নেকি লাভ হয়। রাসুল (সা.) বলেন, যদি কেউ রোজাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে, তবে রোজাদারের নেকি একটুও কমবে না। রমজান মাসে নফলের বিনিময় ফরজ সমতুল্য এবং একটি ফরজের বিনিময় সত্তরটি ফরজের নেকি দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু মাহে রমজানের রোজা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বলা হয়, আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা আমার জন্য আর উহার প্রতিদান আমিই দেব। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ০৬)। তাই রমজানে দানের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। যদিও জাকাত প্রদানের নির্ধারিত কোনো মাস নেই, তবে আলেমরা বলেন, রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি অধিক সওয়াবের অধিকারী হতে পারেন।
ফজিলতের মাস এই মাহে রমজানেই সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য হেদায়েতের মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রমজান মাসে দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে (সূরা বাকারা :১৮৫)। রোজা বা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার নিজের মধ্যে আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। কাজেই নিজেই নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা উচিত। ফলে রোজাদার ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি অর্জনে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রমজানের রোজা পালন করবে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদ)। এই মাসেই লাইলাতুল কদর অর্থাৎ কদরের রাত, যে রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম। তাই তো এই মাস অন্য সব মাস থেকে ফজিলত পূর্ণ।
লেখক: উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। [email protected]