logo
আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:১৭
‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’
কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো

‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’

ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

ঘুষ আর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হওয়া ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি নয়া উপ-পরিচালকের নির্দেশে স্বচ্ছ হয়েছে বলে গুণকীর্তন ছড়িয়ে দিয়েছে কার্যালয়ের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, এখন আর দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে পাসপোর্ট করতে হয় না। দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আসলেই কী তাই? এর সত্যতা খুঁজতে টানা ১৫ দিন অনুসন্ধান করেছে ‘দৈনিক ভোরের আকাশ’। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য।

আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান উপ-পরিচালকের নাম হাফিজুর রহমান। তিনি গত বছরের ১৪ অক্টোবর যোগদান করেন। এরপর কার্যালয়ের সামনে বড় করে প্যানা টাঙিয়ে দেন তিনি। সেখানে লেখা হয়, ‘আপনার পাশে আমরা। পাসপোর্ট করতে এসে কোনো ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি হলে ২০৬ নম্বর কক্ষে সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করুন।’

এমন লেখায় কার্যালয়টির পুরনো চেহারা পাল্টাবে এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন সেবাগ্রহীতারা। কোনো ধরনের সমস্যা হলে প্রধান এই কর্মকর্তার কক্ষের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে যোগাযোগ করেছেন অনেকে। কিন্তু আসলেই কী স্বচ্ছ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নাকি লোকদেখানো কিছু সেবাগ্রহীতার সমস্যা সমাধান করে দালালদের সঙ্গে আঁতাত করে গোপনে পকেটে ডুকছে মোটা অংকের টাকা। এ যেন ধরি মাছ, না ছুঁই পানির মতো অবস্থা। আর এসবের উত্তর খুঁজেছে দৈনিক ভোরের আকাশ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আগের উপ-পরিচালক সালাহ উদ্দিন যোগদানের পর দালালদের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রতিটি পাসপোর্ট বাবদ এক হাজার ২০০ টাকা রেটে ঘুষ নির্ধারণ করা হয়। নয়া উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান যোগদানের পর এক হাজার ২০০ টাকাই রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০টি আবেদন জমা পড়ছে বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা।

তবে সূত্র জানায়, প্রতিদিন আরো বেশি আবেদন জমা পড়ে। যার শতকরা ৮০ ভাগের বেশি জমা পড়ে দালালদের মাধ্যমে। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ২০০টি আবেদন জমা পড়লে একদিনে ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৯২ হাজার টাকা। তবে, ১৫০টি আবেদন জমা পড়লে প্রতিদিন ঘুষের পরিমাণ ২ লাখ ৪ হাজার টাকা। এই হিসাবে প্রতিমাসে ৪২ লাখ টাকার বেশি ঘুষ আদায় হচ্ছে।

আরো জানা যায়, অফিস কর্মকর্তাদের কাজের সুবিধার্থে প্রতিটি আবেদনে বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে দালালরা। এ জন্য প্রত্যেক দালালের রয়েছে আলাদা বিশেষ কোড। পাসপোর্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়া এসব সাংকেতিক চিহ্ন ও কোড বোঝার কোনো উপায় নেই। ফলে দালালরা আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে সরকারি খরচের দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর আবেদনকারী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে এগুলো জমা দেন। কর্মকর্তারা আবেদন দেখেই বুঝতে পারেন কোন দালাল আবেদন পূরণ করে পাঠিয়েছে। কে কতটি আবেদন করেছে, তাও নোট করে রাখা হয়।

এরপর দালালরা ঘুষের নির্ধারিত টাকাগুলো যথাসময়ে পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছে দেন। বিশাল অঙ্কের এই ঘুষের টাকা ভাগাভাগি হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থাসহ মাসোয়ারা হিসাবে অফিসের খাতায় তালিকাভুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির মাঝে মাসের নির্দিষ্ট তারিখেই ঘুষের টাকা বণ্টন করা হয়। এভাবেই দালালদের সঙ্গে আঁতাত করে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট ঘুষবাণিজ্যের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার উপ-পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দৈনিক ভোরের আকাশ। তবে মুখস্থ বিদ্যার মতো বরাবরই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বাইরে কিছু দালাল থাকতে পারে। তবে, পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মকর্তাদের সঙ্গে দালালদের যোগাযোগ নেই বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন তিনি।

এরপরই পরিচয় গোপন রেখে পাসপোর্ট অফিসের সামনে কয়েকজন দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে দৈনিক ভোরের আকাশ। এরা চতুর। ভেতরের তথ্য কেন বাইরে প্রকাশ করবে তারা? এজন্য প্রথমে মুখ খুলতে রাজি হননি। এরপর কৌশল পাল্টায় দৈনিক ভোরের আকাশ। প্রথমে দালালদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়।

পাসপোর্ট অফিসে আসা একজন সেবাগ্রহীতা

পাসপোর্টের আবেদনের বিষয়ে জানতে ওই নম্বরে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। পরিচয় গোপন রেখে ধীরে ধীরে সখ্য গড়ে তোলা হয়। কয়েকজন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবে জানালে পাসপোর্ট অফিসের সামনে তাদের নিজস্ব অফিসে আসতে বলে দালাল। আগে টাকার অংক নিয়ে পরামর্শ করা প্রয়োজন জানালে এক সিনিয়র দালাল রাজি হয়।

গত বুধবার বিকেল ৫টার দিকে উজ্জ্বল নামের ওই দালালকে নগরীর চরপাড়া এলাকায় ডেকে আনা হয়। এ সময় তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়।
তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘দশ বছরের জন্য পাসপোর্ট নিতে চাইলে আমাদের হাতে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। আর ৫ বছরের জন্য করলে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। গ্যারান্টি দিচ্ছি, এক মাসের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাবেন। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে দালালি করছি। আজ পর্যন্ত কথার বরখেলাপ করিনি। তবে, যার পাসপোর্টে যত বেশি সমস্যা, তার টাকার অংকটাও বেশি হবে।’

নিজে আবেদন করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিলেই তা পাওয়া যায়। তা হলে আপনাদের বাড়তি টাকা দেব কেন? এমন প্রশ্নে রীতিমতো রাগান্বিত হয়েছেন তিনি। বলেন, ‘তা হলে ডেকেছেন কেন? সাধারণ পাবলিক হিসেবে গিয়ে দেখেন, পাসপোর্ট সময়মতো পান কিনা। এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে দৌড়াদৌড়ি করে জুতা ক্ষয় করতে হবে। অবশেষে আমাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হবে।’ একপর্যায়ে ঘুষ লেনদেনের সব তথ্য বলে দেন এই দালাল।

তিনি বলেন, ‘অফিসের তালিকাভুক্ত দালাল ছাড়াও সহযোগী দালাল রয়েছে ৫ শতাধিক। কিছু দালাল রয়েছে সরাসরি নিজে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ না করে আরেক দালালকে দিয়ে করায়। এ জন্য সেই দালালকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এরপর আবেদনকারী নিজে গিয়ে আবেদন জমা দেন। ওই চিহ্ন দেখেই কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন কোন দালালের মাধ্যমে কতটি আবেদন জমা পড়েছে। দালাল যতটি আবেদন করবে, প্রত্যকটি আবেদন বাবদ এক হাজার ২০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।’

উজ্জ্বল বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের সামনেই অনেক দালাল অফিস খুলে বসেছে। আমি ও আরেকজন এক সঙ্গে দালালি করি। ওই দালাল আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এরপর দুইজন মিলে বাড়তি টাকাগুলো ভাগ করে নেই। তবে, নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পাসপোর্ট অফিসের জন্য রেখে দেওয়া হয়।’

উজ্জ্বল আরো বলেন, ‘ত্রুটি-বিচ্যুতির পাসপোর্টের জন্য মোটা অংকের ঘুষ দরকষাকষি করে নেওয়া হয়। মুখ দেখেই বোঝা যায়, কে গ্রাম থেকে এসেছে আর কে শহর থেকে এসেছে। এভাবে কম-বেশি করে টাকা নিয়ে কাজ করে দেওয়া হয়। আমরা (দালালরা) যে আবেদনগুলো করে দেই সেগুলো অফিসের কর্মকর্তারা ভুল ধরতে পারবে না। ভুল থাকলেও সব ঠিক। তবে, সাধারণ লোক নিজে আবেদন করে জমা দেওয়ার সময় সামান্য ত্রুটি থাকলে এটিকে বড় ভুল হিসেবে ধরা হয়। ফলে আবেদনকারীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধ্য হয়।’

প্যানা টানানোর বিষয়টি লোকদেখানো

বর্তমান উপ-পরিচালক এসব ঘুষবাণিজ্য বন্ধ করেছেন। কাউকে বাড়তি টাকা দিতে হয় না বলে শোনা যাচ্ছে। অফিসের সামনেও বড় করে প্যানা টাঙানো হয়েছে। তা হলে কী সচেতনতার অভাবেই টাকা দিচ্ছে সেবাগ্রহীতারা?

এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সচেতন হয়েও লাভ নেই। যাদের মুখ পরিচিত, তারা অনলাইনে আবেদন করে সরাসরি জমা দিলে নির্দিষ্ট সময় পর হলেও পাসপোর্ট পাবেন। তবে এ সংখ্যাটা হাতেগোনা কয়েকজন। আর প্যানা টানানোর বিষয়টি লোকদেখানো। যদি পাসপোর্ট অফিস স্বচ্ছই হয়, তা হলে মাস শেষে বণ্টন করা টাকাগুলো আসে কীভাবে? এগুলো ঘুষের টাকা।’

দালালের এই কথার প্রমাণ পেয়েছে দৈনিক ভোরের আকাশ। পরিচয় ও সংস্থার নাম গোপন রাখার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি এই পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতিমাসে দুই হাজার করে টাকা নেই। এটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। যার রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।’

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা

সরেজমিনে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কথা হয় রাফিউল্লাহ নিলয় নামে এক যুবকের সঙ্গে। তিনি গত ২৩ মার্চ জেলার গফরগাঁও উপজেলা থেকে পাসপোর্ট করতে আসেন। পাসপোর্ট করতে কোনো ভোগান্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দালাল ডিঙিয়ে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েছি। ফলে বাধ্য হয়েই দালালদের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। এক দালালকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। সে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এরপর আমি জমা দিতে গেলে তাৎক্ষণিক জমা রাখা হয়। কোনো ভোগান্তি হয়নি।’

জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার কাহালগাঁও গ্রাম থেকে এসেছেন হোসেন আলী। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি পাসপোর্ট করেছিলাম। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল। দুবাই যাব, এজন্য মেয়াদ দশ বছরের জন্য বাড়াতে দালাল বাবলুর মাধ্যমে আরেক দালালকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে আবেদন করেছি। দালাল লিখে দেওয়ার কারণে খুব সহজেই আবেদন জমা দিতে পেরেছি।’

দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিলেন না কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার ও পরিচিত। অনেকে দালাল ছাড়া আবেদন করে ভোগান্তিতে পড়েছে। লেখাতে সামান্য ভুল থাকলেও আবেদন গ্রহণ করা হয় না। অফিস থেকে বলা হয় ঠিক করে নিয়ে আসেন। এ জন্য দালালের শরণাপন্ন হয়ে সহজেই আবেদন জমা দিতে পেরেছি।’

সেবা নিতে আসা একজনের পাসপোর্ট ও ফরম

ভালুকার ডাকুরা এলাকা থেকে আসা মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমার ভোটার আইডি কার্ডে Md. Nasmol hasan ও মায়ের নাম মোছা. নাজমা খাতুন উল্লেখ থাকলেও পাসপোর্টে ভুলবশত আমার নাম Md. Nasmul hasan ও মায়ের নাম মোছা. নাজমা আক্তার এসেছে। এটি সংশোধন করতে ফেব্রুয়ারি মাসে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কোনো কর্মকর্তা পরামর্শ দেননি। এমতাবস্থায় অফিসের সামনে এক কম্পিউটারের দোকানে গেলে এফিডেভিটের মাধ্যমে সংশোধন করতে বলেন। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সব করে দেওয়ার শর্তে ওই দোকানে থাকা দালালকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।’

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মিনহাজুল ইসলাম। তিনি পাসপোর্ট হাতে পেয়ে খুশি। বলেন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্রবেশপথের দুই ধারে সংঘবদ্ধ দালালচক্র অফিস খুলে বসেছে। ফলে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষ অফিসে ঢোকার আগেই ওঁৎ পেতে থাকা এসব দালালের খপ্পরে পড়েন। দালাল অজয়বাবু আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তবুও ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন, এতেই খুশি।

কী ভাবছে সুশীল সমাজ

ঘুষবাণিজ্যের ওপেন সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমীন কালাম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা সৎ হলে দালালদের অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ, সরকারি খরচে যে কেউ পাসপোর্ট হাতে পেলে দালালদের সঙ্গে একজনও যোগাযোগ করবে না। ফলে দালালরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কোন পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যাবে। সরকারি খরচ কত? এগুলো সম্পর্কে এখনো অনেকে জানে না। এগুলো উল্লেখ করে কার্যালয়টির সামনে টানিয়ে সেবাগ্রহীতাদের কেন অবহিত করা হয় না?’

জেলা জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘কার্যালয়টিতে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন, তারাও এগুলো চুপচাপ দেখেন। এতেও বোঝা যায়, দালালদের সঙ্গে তাদের কোনোভাবে যোগসাজশ রয়েছে।’

বর্তমানে পাসপোর্ট করতে চাইলে অনলাইনে সব তথ্য পাওয়া যায় উল্লেখ করে এই নাগরিক নেতা বলেন, ‘আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিসের আলাদা ফেসবুক পেজ থাকা প্রয়োজন ছিল। কারণ, বর্তমানে সবাই ফেসবুক ব্যবহার করেন। এরপর মাঝেমধ্যে পোস্ট দিয়ে যদি লেখা হয় পাসপোর্ট করলে কোন কাগজপত্র ও কত টাকা লাগবে, তা হলে খুব সহজেই একটা ধারণা মিলবে। এতে দালালদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ অনেকাংশেই কমে যাবে।

মানবাধিকার কমিশন জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শিব্বির আহম্মেদ লিটন বলেন, ‘পাসপোর্টটি যখন তার নিজস্ব জায়গায় ছিল না, তখন কর্মকর্তারা দোহাই দিত স্থানীয় লোকজন এসে দালালির কাজগুলো করে। আমরা কিছুই জানি না। কিন্তু পাসপোর্ট ভবনটি নিজস্ব জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার ও নৈরাজ্যও স্থানান্তরিত করে নিয়ে এসেছে। এরপর ডিজিটালাইজেশনের নামে ডিজিটাল দুর্নীতি করা শুরু করেছে। বর্তমানে ডিজিটাল দুর্নীতির মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি চরম সীমায় পৌঁছেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমাজের হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তির পাসপোর্ট করতে দালাল ধরতে হয় না। বাকিদের দালালদের শরণাপন্ন হয়েই যেতে হয়। ডিজিটালাইজেশনের যুগে এই কার্যালয়টিতে রাষ্ট্রীয় সেবা বাস্তবায়ন করতে না পারলে আমরা ডিজিটালাইজেশনের যেই স্বপ্ন দেখি তা প্রথম ধাপেই বিঘ্নিত হবে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সাত মাস ধরে এখানে এসেছি। এর আগে দিনাজপুরে ছিলাম। আমার বাসাও ময়মনসিংহের ভালুকায়। এই কার্যালয়ে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’

দালালদের সঙ্গে আপনাদের যোগসাজশের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে জানালে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উপ-পরিচালক সব বলতে পারবেন।’
এরপর ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি যোগদানের পর কাজে স্বচ্ছতা আনতে চেষ্টা করছি। অফিসের বাইরে দালাল থাকতে পারে, তবে সেটা আগের চেয়ে কম।’

দালালচক্রের অপতৎপরতা রোধে র‌্যাব ১৪-এর অভিযানে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১১ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। এরপরই পাসপোর্ট অফিসটির আগের উপ-পরিচালকসহ অন্তত সাত কর্মকর্তাকে গণবদলি করা হয়। এতেও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি ঘিরে দালালচক্রের অপতৎপরতা রোধ হয়নি।