logo
আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:৩৭
পাগলীমার হাটে দিনে কোটি টাকার মরিচ বিক্রি
নীলফামারী প্রতিনিধি

পাগলীমার হাটে দিনে কোটি টাকার মরিচ বিক্রি

নীলফামারী পাগলীমার হাটে মরিচ বিক্রির জন্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে

মরিচের জন্য বিখ্যাত নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাগলীমার হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে হাটে শুরু হয় হাঁকডাক। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসেন এখানে। বিকেল পর্যন্ত চলে কেনাবেচা।

ভরা মৌসুমে এই হাটে প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মরিচ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। হিসাব করলে এখানে গড়ে প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়।

উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মুছার মোড় এলাকায় অবস্থিত পাগলীমার হাট। মরিচের এই হাটে ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ছাড়াও পাশর্র্^বর্তী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শত শত মরিচচাষি ও ব্যবসায়ী আসেন।

শুধু মরিচ ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠা পাগলীমার হাটে রয়েছে অর্ধশত আড়ত। দূর-দূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় এসব আড়ত সবসময় সরগরম থাকে।

নীলফামারীসহ আশপাশের জেলার উৎপাদিত মরিচের মান ভালো হওয়ায় এই হাটের কদর একটু বেশি। গেল ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে কেনাবেচাও বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এই হাটে আসাতে খুশি স্থানীয় মরিচচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, দিন দিন মরিচের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে চাহিদা। মচিরের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি মরিচ বিক্রি হয়ে থাকে বলে দাবি করছেন হাট ইজারাদার।

হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর হাট। কেউ মরিচ বস্তাবন্দি করছেন, কেউ আবার টাকা গুনছেন। এখানে বিন্দু মরিচ, সাপ্লাই মরিচ, ডেমা মরিচ, ডেমা হাইব্রিড মরিচ, জিরা মরিচসহ দেশি মরিচ পাওয়া যায়।

তবে প্রকারভেদে এসব মরিচ প্রতিমণ ১৩০০-১৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে কোনো কোনো দিন আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি হলে দাম একটু বেশি থাকে।

ঘুরতে ঘুরতে হাটে কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মরিচের ফলন বাম্পার হলেও কিছু মরিচ ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে চিন্তিত তারা।
নিজেরাই স্থানীয় বাজারে কীটনাশকের দোকান থেকে বিষ কিনে মরিচ ক্ষেতে স্প্রে করছেন। কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের পরামর্শ মেলে না বলে অভিযোগ তাদের। তবে দাম ভালো আর মরিচের চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অধিক মুনাফা লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

মরিচচাষি আফজাল আহমেদ বলেন, ‘আমি তিন বিঘা মাটিতে মরিচের চাষ করেছি। মরিচে পোকার আক্রমণের কারণে প্রতি সপ্তাহে স্প্রে করতে হয়। এ পর্যন্ত খরচ ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রায় লাখখানেক টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, আরো এক লাখ টাকার মতো মরিচ বিক্রি করতে পারব।’

আরেক মরিচচাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘মরিচে রোগ দেখা দিয়েছে, সে কারণ চিন্তায় আছি। অসময়েই কোনো মরিচ সাদা, আবার কোনো মরিচ হলুদ হয়ে গেছে। গাছে এবার ফুল-ফলও কম এসেছে। বাজার থেকে ওষুধ কিনে স্প্রে করেছি। এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কারো কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নিতে পারিনি।’

হাটের আড়তদার সমিতির সভাপতি এনতাজুল হক বলেন, ‘পাগলীমার হাটে মরিচের মৌসুমে প্রতিদিন হাট বসে। এমন কোনোদিন নেই, এখানে ৮ থেকে ১০ হাজার মণ মরিচ কেনাবেচা হয় না। এখানকার মরিচ সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এই হাটটি উত্তরাঞ্চলে মরিচের জন্য বিখ্যাত।’

এই হাটে কুষ্টিয়া থেকে আসা পাইকার মজিবর রহমান বলেন, ‘মরিচের জন্য উত্তরাঞ্চলে এটি বিখ্যাত হাট। কয়েক বছর ধরে আমি এই হাটে মরিচ কেনাকাটা করছি। এখানে আমি বিভিন্ন জাতের মরিচ কিনে নিয়ে যাই।’

হাট ইজারাদার রোমান কবির বলেন, ‘আমরা আমাদের লাভের কথা চিন্তা করি না। তারপরও যেহেতু টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছি, সেই হিসাবে যত পারা যায় কৃষকদের ছাড় দেই আমরা।’

এদিকে মরিচচাষিদের অভিযোগ মানতে নারাজ ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান। উল্টো তিনি দাবি করেন, ‘কৃষি বিভাগের অব্যাহত পরামর্শ এবং নির্দেশনায় এই অঞ্চলে মরিচের উৎপাদন বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন।’

আনিছুজ্জামান বলেন, উপজেলায় এ বছর মরিচের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫০ হেক্টর। তার মধ্যে আমরা ৭৮০ হেক্টর অর্জন করেছি। এ বছর মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো যাচ্ছে। মরিচের কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ফল ছিদ্রকারীর একটা পোকা মরিচে আক্রমণ করে থাকে। পোকা দমনে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের ব্লকে যারা আছেন, তারাও পরামর্শ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে যদি কৃষকরা এমামেকটিন বেনজয়েট গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করেন, তা হলে বেশি উপকৃত হবেন। আমরা এই কীটনাশক এক সপ্তাহ পরপর ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।’