logo
আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২২ ১০:২৯
টিপু হত্যাকাণ্ড
মোটরসাইকেল চালক শনাক্ত, আছেন গোয়েন্দা নজরদারিতে
আদালতে শুটার মাসুমের জবানবন্দি
এমদাদুল হক খান

মোটরসাইকেল চালক শনাক্ত, আছেন গোয়েন্দা নজরদারিতে

প্রায় এক দশক আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু।

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে হত্যায় কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মোটরসাইকেল চালককে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। তার নাম মোল্লা শামীম। সে শুটার মাসুম আহম্মেদ আকাশের বন্ধু। ইতোমধ্যে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ডিবির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মোল্লা শামীম ঘটনার দিন মাসুমকে মোটরসাইকেলে করে শাহজাহানপুরে টিপুর মাইক্রোবাসের সামনে নিয়ে যান।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শুটার মাসুম আহম্মেদ আকাশকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির কর হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মাসুম। বন্ধু মোল্লা শামীমের মোটরসাইকেলে করে সেদিন ঘটনাস্থলে যান। জাহিদুলকে গুলি করে শামীমের মোটরসাইকেলে করে এলাকা ত্যাগ করেন।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, সাত দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে শুটার মাসুম আহম্মেদ আকাশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। মাসুমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি বলছে, ঘটনার দিন মোটরসাইকেলে করে শাহজাহানপুরে গিয়ে জাহিদুলকে গুলি করেন মাসুম। এ সময় মোটরসাইকেল চালান তার বন্ধু মোল্লা শামীম। তিনিও গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন।

ডিবির কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে পড়ায় মাসুম পরিবার থেকে আলাদা থাকা শুরু করেন। এসব মামলা নিয়ে হতাশা ছিল তার। জাহিদুলকে হত্যা করতে পারলে সেসব মামলা থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে মাসুম। হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল প্রসঙ্গে মাসুম ডিবিকে বলেছেন, একজন পরিচিত লোক তাকে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল দিয়েছিলেন। ঘটনার পর একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সেই অস্ত্র ও মোটরসাইকেল ওই ব্যক্তির কাছে জমা দেন।

গত ২৭ মার্চ বগুড়া থেকে মাসুমকে গ্রেপ্তারের পর ওই দিন দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান (অতিরিক্ত কমিশনার) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর জাহিদুল ইসলাম টিপুর রেস্টুরেন্টের কাছে যান মাসুম। সেখানে অনেক লোকজন থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করতে থাকেন। টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর রেললাইনের আগে আমতলাসংলগ্ন রাস্তায় যানজটে আটকা পড়লে টিপুকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার পরও মাসুম বিশ্বাস করতে পারেনি সে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। তার ধারণা ছিল তিনি গ্রেপ্তার হবেন না। তবে সিসি ক্যামেরায় প্রাপ্ত ছবি ও তথ্য উপাত্ত বিবেচনায় আমরা তাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। সে সুঠাম দেহের অধিকারী। তার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রী ও পরিবার রয়েছে। বিভিন্ন মামলা ও সমস্যার কারণে সে এলাকায় যেতে পারত না। পুরাতন মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে সে এমনটা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

গত শুক্রবার জাহিদুল হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার সন্দেহে আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবির কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। গত রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চায় ডিবি। আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আরফান উল্লাহকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। অস্ত্র মামলায় এক দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার আরফানকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত নতুন করে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ব্যস্ত সড়কে গুলি করে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। তখন এলোপাতাড়ি গুলিতে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।