logo
আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:২০
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের কারণ জানালেন আশীষ রায়
নিজস্ব প্রতিবেদক

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের কারণ জানালেন আশীষ রায়

আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে কি কারণে খুন করা হয়েছে তা জানিয়েছেন অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

আশীষ রায় জানিয়েছেন, ট্রাম্পস ক্লাবের অসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধের দ্বন্দ্বের জের ধরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোহেল চৌধুরীকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই, আশিষ চৌধুরী ও বান্টি ইসলাম। এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে। ইমন ও তার লোকজন মিলে চিত্রনায়ক সোহেলকে গুলি করে হত্যা করে।

# গ্রেপ্তার এড়াতে কানাডায় পালানোর চেষ্টা আশীষ রায়ের

# হত্যার দায়িত্ব নেয় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন

# ট্রাম্পস ক্লাব ছিল ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিরাপদ স্থান

র‍্যাব বলছে, বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের পাশেই ছিল বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বনানী জামে মসজিদ। ট্রাম্পস ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারারাত বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলতো। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদের কমিটি নিয়ে বারবার ট্রাম্পস ক্লাবের এ ধরনের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

বুধবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছর পূর্বের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক ও চার্জশিটভুক্ত আসামী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় উদ্ধার করা হয় ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, ১ টি আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, ২টি আইফোন ও নগদ ২ লক্ষ টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে গ্রেপ্তারকৃত বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেন।


আরো পড়ুন : চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার আসামি আশিষ রায় গ্রেপ্তার

আশিষ রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশিষ রায় চৌধুরী এবং আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম এর যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস্ ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ৫০ লক্ষ টাকার পুঁজি নিয়ে ট্রাম্পস্ ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন আশিষ রায় এবং অবশিষ্ট ২৫ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন পলাতক বান্টি ইসলাম।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পর্যায়ক্রমে এই ট্রাম্পস্ ক্লাবটি সকল আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন এবং গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। এখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। আজিজ মোহাম্মদ ভাই মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সাথে বিভিন্ন ধরণের মিটিং বা তাদের পরিচালনা করার জন্য সেই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত এবং সেই ক্লাবকে ব্যবহার করতেন। সেই সুবাদে ট্রাম্পস্ ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম এবং আশিষ রায় চৌধুরীর সাথে তার সখ্যতা তৈরি হয়।

র‍্যাব জানায়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজিকে বান্টি ইসলাম বিয়ে করে। এ কারণে তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল এবং বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় যুবক বয়স থেকে একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরী একসাথে ট্রাম্পস্ ক্লাবে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড ও অপরাধ জগতের ব্যক্তিদের সাথে জড়িত থেকে এ ধরণের অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আরও জানান, গত ২৪ জুলাই ১৯৯৮ সালে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে ভিকটিমের সরাসরি তর্ক এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সোহেল চৌধুরীর ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীকে অনুরোধ জানান। ট্রাম্পস্ ক্লাবে জনসম্মুখে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সোহেল চৌধুরী অপমান করার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরী পরিকল্পনা করতে থাকে। ট্রাম্পস্ ক্লাবে তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তখন বান্টি ইসলাম, আশিষ রায় চৌধুরী ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনকে দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাব দেয়। তৎকালীন মাফিয়া আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও ট্রাম্পস্ ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীর অনুরোধে ইমন তাদের সাথে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাবে রাজী হয় এবং পরবর্তীতে ইমন এই হত্যাকান্ডটি সম্পন্ন করেন।

সর্বশেষ ২৮ মার্চ ২০২২ আশিষ রায় চৌধুরীর নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। আগামী ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। পরবর্তীতে তাকে রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোররাত ৩টার দিকে বনানীর ট্রাম্পস্ ক্লাবের নিচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৫৯। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।