logo
আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২২ ২১:২৪
এসএসসির ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে বিদায়ী উপহার ‘স্যানিটারি প্যাড’
কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো

এসএসসির ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে বিদায়ী উপহার ‘স্যানিটারি প্যাড’

ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসির ছাত্রীরা বিদায়বেলায় অনুজদের জন্য যে উপহার দিয়েছে তা দেশের সব বিদ্যালয়ের জন্যই অনুকরণীয় হতে পারে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বুঝে নিচ্ছেন তাদের উপহার।

পিরিয়ড মেয়েদের জীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ নিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের বিপাকে ও লজ্জায় পড়তে হয় সবচেয়ে বেশি। বিষয়টিকে অনেকে লজ্জায় গোপন রাখে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একদল ছাত্রী।

২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রীরা বিদায় অনুষ্ঠানে চাঁদা তুলে জুনিয়র ছাত্রীদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছে হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ও ভেন্ডিং মেশিন। এমন মহৎ উদ্যোগে খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ শিক্ষকরাও।

বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে টাঙানো হয়েছে ভেন্ডিং মেশিনটি। ভেতরে এক এক করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হাইজিন স্যানিটারি প্যাড। যার প্রয়োজন সে একটি কার্ড ব্যবহার করে এটি নিতে পারবে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এই উদ্যোগটি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে অবাক করেছে। তারা কখনোই ভাবেনি, সিনিয়ররা জুনিয়রদের জন্য এত ভালো একটি উপহার দেবে। এতে
সবাই খুশি। ময়মনসিংহের প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন উদ্যোগ চালু করা প্রয়োজন। তাহলে কোন মেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে না।

বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আয়েশা খাতুন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বিদ্যালয়ে এসে অনেক মেয়ে হঠাৎ বাসায় চলে যেতে চায়। আমরা জিজ্ঞেস করলেও ঠিকঠাক উত্তর দেয় না। এতে বোঝা মুশকিল হয়ে যেত সমস্যাটা কোথায়। তবে, তাদের চোখেমুখে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির ছাপ দেখে মাঝে-মধ্যেই বুঝতে পেরেছি হয়ত পিরিয়ড হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে হাইজিন স্যানিটারি প্যাড না থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি লজ্জায় পড়ে এসব মেয়ে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এমন উদ্যোগ নেওয়ায় তারা প্রশংসার দাবিদার।

স্বপ্না বেগম নামে আরেকজন শিক্ষক বলেন, শারীরিক বা প্রাকৃতিক কারণে অনেক সময় চতুর্থ শ্রেণির মেয়েরও পিরিয়ড হয়ে যায়। তখন তারা না বোঝার কারণে প্রস্তুতি থাকে না।
এটি লজ্জার বিষয় নয় তা মেয়েদের ক্লাসে বারবার বুঝিয়েছি। বলেছি, স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার না করার কারণে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে হাইজিন স্যানিটারি প্যাড রাখা প্রয়োজন। তাহলে মেয়েদের অস্বস্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াশোনা করতে পারবে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, একদল শিক্ষার্থী আমাকে এসে বললো, ‘ম্যাডাম, বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় পিরিয়ড হওয়ার পর হাইজিন স্যানিটারি প্যাড না থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। আমরা চাই না আর কেউ এমন পরিস্থিতিতে পড়ুক। এজন্য বিদ্যালয়ে ভেন্ডিং মেশিনসহ হাইজিন স্যানিটারি প্যাড উপহার দিতে চাই। কথাটি শুনে আমি অবাক হয়েছি। বিষয়টি আমাদের মাথায়ও এমনভাবে আসেনি।

তিনি বলেন, মেশিনটি দেয়ালে টাঙানো হয়েছে। ভেতরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্যাড। প্রতিটি ক্লাসের ক্যাপ্টেনের কাছে একটি কার্ড রাখা হয়েছে। যার প্রয়োজন সে ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে কার্ডটি সংগ্রহ করে স্যানিটারি প্যাড নিতে পারবে। যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আমরা রিফিল করবো।

প্রধান শিক্ষক বলেন,‘এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। অনেকে এসব গোপন করার বিষয় থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই মেশিন চালু হওয়ায় ছাত্রীরা খুশি। স্বাচ্ছন্দ্যে অনেকে প্যাড ব্যবহার করতে পারবে এখন থেকে।’