বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় দেশটি। গতকাল বুধবার (৬ এপ্রিল) ওয়াশিংটন ডিসিতে দিনব্যাপী বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলা ৮ম নিরাপত্তা সংলাপে এ আগ্রহ দেখায় দেশটি।
সংলাপে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অ্যাম্বাসেডর বনি ডেনিস জেনকিন্স নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
সংলাপে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন অস্ত্র বিষয়ক গোপন তথ্য বিনিময় ও সুরক্ষার চুক্তি (জেনারেল সিকিউরিটি অফ মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট-জিসোমিয়া) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এছাড়া অস্ত্র কেনাকাটা বিষয়ক চুক্তি (একুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট-আকসা) নিয়েও আলোচনা হয়। প্রতিরক্ষা বিষয়ক এ দুটি চুক্তির মাধ্যেমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরবর্তী ধাপ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আকসা চুক্তি সই করে যুক্তরাষ্ট্র। একই বছর ভারতের সঙ্গে জিসোমিয়া চুক্তি করে দেশটি। দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে এ দুটি চুক্তিই সইয়ে আগ্রহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
দিনব্যাপী বৈঠকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন, বাংলাদেশ ইউএস সিকিউরিটি কো-অপারেশনসহ সামরিক প্রশিক্ষণ, সমুদ্র নিরাপত্তা, প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি, প্রতিরক্ষা ক্রয় ও সক্ষমতা উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। আঞ্চলিক সমস্যা যেমন রোহিঙ্গা, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং সন্ত্রাস দমন ও বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো নিয়েও উভয় পক্ষ গঠনমূলক আলোচনা করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইন প্রয়োগকারী এবং প্রসিকিউটরিয়াল সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় অব্যাহত সমর্থনের বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছে সংলাপে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে র্যাবের অগ্রণী ভূমিকাও তুলে ধরা হয়। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উভয় পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়।
সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্য দেয় বাংলাদেশ।
মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের প্রশংসা করে, বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্য ও নেতৃত্বের। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করার পাশাপাশি সম্ভাব্য সব সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রশংসা করার পাশাপাশি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।
সংলাপে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমর্থন প্রকাশ করে।
সংলাপে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট দ্রুত পুনরায় চালুর লক্ষ্যে উভয় পক্ষ আলোচনা করে। দুই পক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়।
সংলাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে দেশটির সহকারী সচিব জেসিকা লুইস এবং ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কেলি কিডারলিং ছিলেন সংলাপে। সংলাপের বাইরেও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামানও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে ৯ম নিরাপত্তা সংলাপ হবে ঢাকায় ২০২৩ সালে।