উড়ছেন করিম বেনজেমা। তারই সূত্র ধরে উড়ছে তার দল রিয়াল মাদ্রিদ। আগের ম্যাচেই জোড়া গোল করেছিলেন এই ফ্রেঞ্চ তারকা। আর বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে করেছেন হ্যাটট্রিক। তার হ্যাটট্রিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চেলসির শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন উড়ে গেছে। বেনজেমার হ্যাটট্রিকে অ্যাওয়ে ম্যাচে চেলসির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ গোলে জয় পেয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিল বার্নাবুতে ফিরতি লেগের খেলা হবে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নেই। চলে গেছেন মেসিও। সব আলো নিজের দিকে নেওয়ার চেষ্টায় তাই যেনো কোনো ত্রুটি নেই। একের পর এক ম্যাচে আলো ছড়িয়ে চলেছেন তিনি। ম্যাচ জিততে যা কিছু করার সবই করেছেন বেনজেমা। ২১, ২৪ ও ৪৬ মিনিটে গোল হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। সে সঙ্গে নিশ্চিত হয় দলের জয়।
নিজেদের মাঠে খেলা বলে চেলসি সমর্থকরা একটু আশাবাদী ছিল। সমর্থকদের আশাবাদী হওয়ার মতোই শুরু করেছিল তারা। বিশেষ করে ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে সমানতালে চলেছে থমাস টুখেলের ছেলেরা। তবে এক ঝটকায় সব আলো কেড়ে নেন বেনজেমা। হেডে অসাধারণ এক গোল করেন তিনি। বাম দিকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের ক্রস থেকে উড়ে আসা বলে ক্ষিপ্র গতিতে যে হেড করেন তা চেলসি গোলরক্ষকের কিছুই করার ছিল না। এক গোলের ধাক্কা হজম করতে না করতেই চেলসি গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডিকে আবার জাল থেকে বল কুড়িয়ে আনতে হয়। আরো একবার দুর্দান্ত হেডে গোল করেন বেনজেমা। কোন হেডটা বেশি সুন্দর তা নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে। বক্সের বাইরে থেকে লুকা মডরিচের হঠাৎ করে পাঠানো বলে চেলসির দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে হেড করেন বেনজেমা। এডুয়ার্ড বলের দিকেই ঝাঁপিয়েছিলেন। কিন্তু বল তার আয়ত্বের বাইরে দিয়ে জালে আছড়ে পড়ে।
কাই হাভার্টজের গোলে চেলসি খেলায় ফেরার চেষ্টা করেছিল। সমর্থকদের মনে আশা তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশা তারা আর ধরে রাখতে পারেনি। বিরতির আগে জর্জিনহোর ক্রস থেকে কাই হাভার্টজ গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন। তার চমৎকার হেড থিবু কর্তোয়াকে হতাশ করে জালে আশ্রয় নেয়।
বিরতির আগে গোল পাওয়া চেলসি কোচ কিছুটা হলে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। অন্তত ড্রয়ের প্রত্যাশায় বিরতির সময় দুটো পরিবর্তনও আনেন দলে। কিন্তু তার এ পরিবর্তন মাঠে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কেননা নতুন খেলোয়াড়রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই করিম বেনজেমা আবার সব আলো কেড়ে নেন। হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। এ গোলের জন্য বেনজেমা অবশ্য চেলসি গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। ফাঁকা জালে দেখেশুনে বল পাঠিয়ে দেন বেনজেমা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এমন সহজ গোলের সুযোগ কেউ কখনো পেয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন জাগতে পারে।
ম্যাচ শেষে বেনজেমা বলেন, ‘গোলগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় গোলটি করতে পেরে আমি দারুণ খুশি। প্রথমার্ধে একটি গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়ায় আমি বেশ হতাশায় ছিলাম। যাহোক আমি আরো একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। তা থেকে গোল করতে পেরে আমি খুশি। আসলে এ ম্যাচ আমরা জিততেই এসেছিলাম। তাদের দেখাতে চেয়েছিলাম আমরা রিয়াল মাদ্রিদ। সবকিছু ভালোভাবে হয়েছে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা ভালো খেলেছি।’
বুধবারের তিন গোলের ফলে মৌসুমে বেনজেমার গোলের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৬। তার ওপরে আছেন শুধু রবার্ট লেভানদভস্কি। বায়ার্ন মিউনিখের এ তারকা ৪৫ গোল করেছেন। তবে এদিন বেনজেমা নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে বয়োজোষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন। ৩৪ বছর ১০৮ দিন বয়সে এবারের হ্যাটিট্রিক করেছেন বেনজেমা। গত ৯ মার্চ শেষ ষোলোর ফিরতি লেগের লড়াইয়ে প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। এর ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন বেনজেমা।