মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধ শতাব্দীর পথচলায় বহু আলোচনা-সমালোচনা আছে; আছে অনেক পাওয়া-না পাওয়া। তবে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশকে পাঠানো মার্কিন চিঠি কিংবা ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের প্রশংসা-স্তূতিবাদ ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র’ সম্পর্কে ‘অনন্য’ মাত্রা যোগ করেছে। গত সোমবার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিংকেন চিঠি লেখেন। চিঠিতে এ বছরকে দু’দেশের অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চিঠিতে ব্লিংকেন বলেন, সন্ত্রাস, মানবপাচার ও অবৈধ মাদক পাচারের ক্ষতির কবল থেকে আমাদের জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে দু’দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রশংসনীয়। শ্রম অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সুশাসন, বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় উল্লেখ করে এগুলোর উপর সংলাপের ধারাবাহিকতাকে ব্লিংকেন স্বাগত জানান। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, উন্নয়নে বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধানের মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের নিবিড় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন।
ব্লিংকেন বলেন, দু’দেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপন অর্থবহ করতে ছয় কোটি ডোজ কোভিড ভ্যাক্সিন সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অত্যন্ত গুরুত্ববহ এ বৈঠক নিয়ে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ইস্যু করা বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেছেন, এটা খুব আনন্দের বিষয়, আজ (মঙ্গলবার) এখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে পেয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব আরো জোরদারের লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারব। আমরা আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি। আমাদের ৫০ বছরের এ পথচলার কথা ভাবলে আমরা আমাদের অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে আগামী ৫০ বছর একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা করি, যেমনটা আমি বলছিলাম। বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অন্য দেশগুলোকে একত্র করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ মানবতা ও উদারতা দেখাচ্ছে। আমরা সে কারণে এবং বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার অন্যতম প্রবল সমর্থক ও এমন আরো অনেক কাজের জন্য বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞ।
মার্কিন বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের সম্পর্কের অসাধারণ ও ব্যতিক্রমী অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত অর্ধশতক ধরে আমাদের দুই দেশ যেভাবে পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জলবায়ু সংকট মোকাবিলা ও গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের চাহিদা মেটাতে চলমান সহযোগিতা এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাড়ানো, নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি হিসেবে মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন এবং স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের গুরুত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয় বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো ৫০ বছর উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে চেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রও এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাশে থাকার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এ বৈঠক, আলাপ-আলোচনা এবং বার্তা আদান-প্রদান সামনের দিনগুলোতে দু’দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।