logo
আপডেট : ৭ এপ্রিল, ২০২২ ১১:৫৩
‘গরিবের আবার কিসের ইফতার’
ইফ্ফাত শরীফ

‘গরিবের আবার কিসের ইফতার’

পুরান ঢাকার চকবাজারের একটি বাহারি ইফতারের দোকান। ছবি- ভোরের আকাশ

‘গরিবের আবার ইফতার কিসের! নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে তিন বেলা খাবার কেনাই কষ্টকর! ভালো ইফতারি কেনার সাধ্য তো আমাদের নেই। ফুটপাত থেকে যা কিনতে পারি তা খেয়েই শান্তিতে থাকি।’ কী দিয়ে ইফতার করেন এমন প্রশ্ন করতেই আক্ষেপ প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন রিকশা চালক হোসেন মিয়া। থাকেন মালিবাগ রেললাইনের পাশের বস্তিতে।

ইফতার প্রসঙ্গে তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ভাই, আমরা গরিব মানুষ, আমাগো আবার ইফতার! সারা দিন রোজা রাইখা রিকশা চালাই। খুব কষ্ট হয়। তারপরও কী করার আছে। রিকশা না চালাইলে খামু কী? সব সময় আবার রোজা রাখতেও পারি না। প্রতিদিন রোজা রেখে রিকশা চালানো সম্ভব হয় না। অসুস্থ হয়ে পড়ি। এজন্য যেদিন রোজা রাখি সেই দিন রিকশা একটু কম চালাই। সকাল থাইকা দুপুর পর্যন্ত।’

হোসেন মিয়ার মতো বহু শ্রমজীবী মানুষ প্রতিদিন ইফতার সারেন সড়কের পাশের ফুটপাতে। সামান্য মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু আর পানিই তাদের ভরসা।

বাংলাদেশে রমজানে যে যার সাধ্যমতো ইফতার করে থাকে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ইফতারে নানা রকমের আয়োজন করে থাকে। তবে যেসব গরিবের দুই বেলা দুই মুঠো খাবার জোটে না তাদের জন্য ইফতার এক ধরনের আকাশ কুসুম চাওয়ার মতো।

রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ১০ থেকে ১৫ শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে। তারা জানান, কষ্ট হলেও ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেন ইফতারি কিনতে। তবে যেদিন আয় ভালো হয়, সেদিন ইফতারি আইটেমের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায়। তাদের ভরসা ফুটপাতের দোকান। ইফতারি কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেকে ভিড় জমান মসজিদে। কেউবা মানুষের কাছে চেয়ে বা হাতপেতে থাকেন।

মৌচাক মগবাজার এলাকার বাসে হকারি করেন আবদুল গণি মিয়া। তিনি বলেন, ‘যখন চারদেকে সবাই ইফতার করে, তখন তো আমি না খাইয়া বইসা থাকতে পারি না। কষ্ট হলেও ইফতারি কিনি।’ কত টাকা ব্যয় হয় ইফতারি কিনতে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ১০ থেকে ১৫ টাকার বেশি খরচ করতে পারি না।

গণি মিয়ার মতো রাজধানীর বায়তুল মোকারমের সামনে আরেক হকার আফজাল হোসেন বলেন, ‘বাড়িত আমার আরো ছয়জন সদস্য আছে। তাদের মুখের দিকে তাকাইয়া ইফতারিতে বেশি টাকা খরচ করতে পারি না।’

গুলিস্তান হকি স্টেডিয়ামের সামনে নাতিকে নিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে বেড়ান ফরিনা বেগম। দরিদ্র এই নারী ভোরের আকাশকে বলছিলেন ‘সারা দিন রোজা থাইক্কা সন্ধ্যার পরে পানি মুখে দেই। পানি পান্তা যা পাই তা-ই খাই। কোনো কামাই রুজি করতে পারি না। মানুষ যা সাহায্য দেয় তাই খেয়ে পড়ে আল্লাহর উছিলায় বাইচ্চা আছি।’

অনেক গরিব মানুষের ঘরে চুলায় আগুন জ্বলে না। হাঁড়িতে ভাত থাকে না। ইফতার তো দূরের কথা। পানি ছাড়া আর কিছুই জোটে না তাদের ভাগ্যে। খিলগাঁও রেলগেটের পাশের বস্তিতে মেয়ে আর তিন নাতি নিয়ে থাকেন মোমেনা বেগম (৬৫)। বয়স্ক এই নারী বলেন, ‘আল্লাহ যা রিজিকে রাখছে খাই। ইস্তারি করি ভাত দিয়া। কোনো সময় পানি দিয়া ইস্তারি করি, আল্লাহ যে রকম জোগাড় করে সে রকম খাওন লাগে’।

খিলগাঁও রেলগেট বস্তির আরেক বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘রমজান মাস তো গরিব মাইনষেরে দান-খয়রাত করার মাস। পঙ্গু মানুষ! পেটের দায়ে ভিক্ষা কইরা খাই। কিন্তু অহন আর কেউ দান-খয়রাতও করতে চায় না। বাসাবাড়িতে, মসজিদে ভিক্ষা চাইতে গেলে সবাই দূর দূর কইরা তাড়াইয়া দেয়। বেশির ভাগ সময় রোজা খুলি ভাত খাইয়া। তবে মাঝে-মইধ্যে আবার ছোলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ দিয়াও ইফতার করি।’