logo
আপডেট : ৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:০৫
টাকা ছাড়া মিলছে না টিসিবির কার্ড
জে আই সমাপ্ত, লালমনিরহাট

টাকা ছাড়া মিলছে না টিসিবির কার্ড

মৌলভীবাজারে টিসিবির পণ্য নিতে ভিড়। ফাইল ছবি

সারাদেশের মতো লালমনিরহাটের বিভিন্ন ইউনিয়নে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি চলছে। তবে জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নে কার্ড পেতে সুবিধাভোগীদের গুনতে হচ্ছে ৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে দুটি ইউপিতে চেয়ারম্যানদের অবহেলায় রমজান শুরু হলেও চার হাজার ২৫টি পরিবার এখন পর্যন্ত পায়নি টিসিবির পণ্য। এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি কার্ডপ্রতি খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যানের এমন অলিখিত নির্দেশনার সুযোগ পেয়ে ইউপি সদস্যরা কার্ডপ্রতি ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।

শুধু বড়বাড়ি ইউনিয়ন নয়; পার্শ্ববর্তী মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নেও কার্ড নিতে সুফলভোগীদের গুনতে হচ্ছে টাকা। এমন অভিযোগ ইউপি মাঠে পণ্য নিতে আসা শত শত মানুষের।

বড়বাড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জিনাত আলী। তিনি বলেন, ‘ইউপি সদস্যকে একশ’ টাকা দিয়ে কার্ডটি নিয়েছি। টাকা ছাড়া কাউকে কার্ড দেওয়া হচ্ছে না।’

একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, কার্ড পেতে স্থানীয় মেম্বারকে ৫০০ টাকা দিয়েছেন তিনি।

বড়বাড়ি ইউপির ১নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল আলম বলেন, ‘চেয়ারম্যান কার্ডের খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে নিতে বলেছেন, তাই নিয়েছি। এ সময় কেউ চা খাওয়ার জন্য আরও ২০ টাকা মিলে মোট ৫০ টাকাও দিয়েছেন।’

বড়বাড়ির চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি টাকা নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সরকার কার্ড তৈরির নির্দেশনা দিলেও জনবল বা তার জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়নি। দুই হাজার ৪০০ কার্ড করতে যারা শ্রম দিয়েছেন, তাদের পারিশ্রমিক বাবদ কার্ডপ্রতি ৩০ টাকা নিয়ে ইউপি সদস্যদের হাতে কার্ড বুঝে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কেউ নিয়ে থাকলে তার জবাব সে-ই দেবে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ‘ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। কেউ নিয়ে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিসিবির পণ্য নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।’

অপরদিকে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ও দলগ্রাম ইউনিয়নে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু হয়নি। ওই দুই ইউপির চেয়ারম্যান উপকারভোগীদের তালিকা জমা না দেওয়ায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। পণ্য না পেয়ে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

দলগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘সরকার অসহায়-দুস্থ মানুষের কথা চিন্তা করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। বিভিন্ন স্থানে এসব পণ্য বিক্রি করা হলেও আমরা এখন পর্যন্ত পায়নি। চেয়ারম্যানরা এ বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন না, তাই এখন পর্যন্ত আমরা টিসিবির পণ্য পায়নি। ’

দলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এই ইউনিয়নে মোট দুই হাজার পাঁচটি কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অর্ধেক কার্ড দাবি করছে। এ জন্য পরিষদ থেকে কোনো নাম পাঠানো হয়নি।’

এ বিষয়ে চন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

কালীগঞ্জের ইউএনও আব্দুল মান্নান বলেন, ‘দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপকারভোগীদের তালিকা জমা না দেওয়ায় পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে আগামী সপ্তাহে পণ্য দেওয়া হবে।’