logo
আপডেট : ৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:২৮
রিয়াজ বাহিনীর প্রধান ‘শ্যুটার রিয়াজ’সহ গ্রেপ্তার ৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

রিয়াজ বাহিনীর প্রধান ‘শ্যুটার রিয়াজ’সহ গ্রেপ্তার ৫

রিয়াজ বাহিনীর প্রধান রিয়াজসহ গ্রেপ্তার পাঁচজন। ছবি- সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত রিয়াজ বাহিনীর প্রধান রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শ্যুটার রিয়াজ ও তার চার সহযোগীকে গতকাল বুধবার (৬ এপ্রিল) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যারের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের তিনি আরো জানান, এই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা গত ২৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিদ্যুতের বাড়িতে গিয়ে তাকে লক্ষ করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ ঘটনায় তার নিস্পাপ মেয়ের একটি চোখে গুলি লাগে, চোখটি নষ্ট হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্যদের ওপরও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। 

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পেশাদার খুনি ও অবৈধ অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শ্যুটার রিয়াজ (২২), তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা (২৩), মারুফ হোসেন মুন্না (২৩), মো. সেলিম (২৩) ও মো. মাহবুব মিয়াকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৩টি ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, ৫টি ধারালো দেশীয় অস্ত্র, একটি মোটরসাইকেল এবং ৬০০ পিস ইয়াবা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য দিবালোকে সশ্রস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ ও ২০ জন আহত হন। সে সময়ে এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শফিক ও শামীম মল্লিক নামে দুই ব্যক্তিকে তাদের বাসার সামনে অতর্কিতভাবে এলোপাতাড়ি গুলি করে এই সন্ত্রসী বাহিনী।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও জমি দখলকে কেন্দ্র করে রিয়াজ বাহিনীর প্রধান শ্যুটার রিয়াজের নেতৃত্বে গত ৭ নভেম্বর রূপগঞ্জ এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হন।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও তার আশপাশ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কাজে উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে আসছিল। তাদের সন্ত্রাসী দলের সদস্য সংখ্যা ১০-১৫ জন। রিয়াজের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এলাকায় জমি দখল, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করত। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ত্রাস সৃষ্টির জন্য হামলা চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখাত।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জানান, রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা ও বেশ কয়েকটি জিডি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারা ভোগ করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃত জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা রিয়াজ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। তিনি সবজির ব্যবসা করতেন। ২০১৯ সালে রিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হলে রিয়াজ তাকে তার সশস্ত্র বাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি রিয়াজের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। রিয়াজ বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে রাখতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে রূপগঞ্জ থানায় ৬টি মামলা রয়েছে। তিনিও বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারা ভোগ করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃত মারুফ হোসেন মুন্না রিয়াজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি সোনারগাঁ এলাকায় মাটি কাটার ব্যবসা করতেন। এই ব্যবসা করার এক পর্যায়ে ২০২১ সালে তিনি রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেন। মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও অস্ত্র সরবরাহের কাজে রিয়াজকে সহযোগিতা করতেন মুন্না। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মাহবুব মিয়া রূপগঞ্জ এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা করেন। ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি রিয়াজের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছিলেন।

গ্রেপ্তারকৃত সেলিম ২০১৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যান এবং সেখানে মসজিদে কার্পেট বিছানোর কাজ করতেন। কিছুদিন আগে দেশে ফিরে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হন তিনি।

গ্রেপ্তার পাঁচজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।