টাকার বিনিময়ে বিক্রি হতো বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সার্টিফিকেট, এমনকি এমবিবিএস সার্টিফিকেটও। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান খুলে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ১৪৪টি বিষয়ের সার্টিফিকেট দিতেন চক্রের প্রধান (বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি) মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের ( ডিবি ) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, চক্রের প্রধান নুরুল হক ১৯৯৬ সাল থেকে শত-শত ভুয়া চিকিৎসককে এমবিবিএস-বিডিএস সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বিনিময়ে প্রতিটি এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য হাতিয়ে নিয়েছেন পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এ অভিযোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও একজন সহযোগীসহ ৪ জন ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিম।
বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-চক্রের মূলহোতা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভিসি নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার, মো. মোয়াজ্জেম হোমেন, ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ, ডা. মো. আমান উল্লাহ (৩৮) ও দেবাশীষ কুন্ডু (৫২)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড, নকল সিল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের ৪টি চেক, ভুয়া সনদ প্রদানের চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, নব দিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারের কপি, একটি সিপিইউ ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়। ভুয়া সনদপত্র তৈরি ও ছাপার কাজে এসব ব্যবহার করা হতো।
ডিবি প্রধান জানান, গ্রেপ্তাকৃতরা মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাশ করে টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নেন। দাখিল ও কামিল পাশে কোনোভাবেই এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সুসজ্জিত চেম্বার খুলে তারা রোগীও দেখতেন নিয়মিত।
তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটি প্রায় দুই দশক ধরে ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি’ নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্টিফিকেট বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন। তারা ভুয়া ওয়েবসাইটে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন। বিজ্ঞাপনে কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাসের কথা উল্লেখ থাকতো, যা বাস্তবে অস্তিত্বহীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ ও একটি হাইকোর্টের জাল রিট প্রদর্শন করতেন তারা । তাদের রোগী দেখার চেম্বার ছিল অত্যাধুনিক উপায়ে সজ্জিত। নামফলক ছিল নানান গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি সম্বলিত। তারা এমবিবিএস ও বিডিএসসহ ১৪৪টি বিষয়ে অসংখ্য সার্টিফিকেট প্রদান করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ডিবি প্রধান বলেন, বাস্তবে ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি’ এর কোন অস্তিত্ব নাই। একইভাবে ডাঃ মোঃ নুরুল হক সরকার নিজেকে Pitch Blende university of Science and technology (PUST) এবং Peace Land university নামক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে পরিচয় দিতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি জানান, মোঃ সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, দেবাশীষ কুণ্ডু, আমান উল্ল্যাহ, মোঃ মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজসহ অসংখ্য ব্যক্তিকে ভুয়া ডাক্তারি সনদপত্রসহ অন্যান্য বহু বিষয়ে ভুয়া সনদপত্র প্রদান করেছেন। ভুয়া ডাক্তার এমএন হক তার পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটি কোনোরকম পরীক্ষা, ক্লাস ও বৈধ অনুমোদন ছাড়াই টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেট বিক্রয় করেছে।
ডিবির এ কর্মকর্তা জানান, ভুয়া ডাক্তারি সনদ নিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে চক্রের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।