logo
আপডেট : ৮ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:৪০
করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি: সতর্কতা অবলম্বন জরুরি
* সরকার প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করেছে : ড. আতিউর রহমান * ঋণনির্ভর বড় প্রকল্প গ্রহণ না করা ও চলমান প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে হবে : ড. জাহিদ হোসেন
জাফর আহমদ

করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি: সতর্কতা অবলম্বন জরুরি

করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহের ফাইল ছবি

করোনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ঠিক সেই সময় শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। থমকে গেছে আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভারে চাপ পড়েছে। এ অবস্থায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বিশ্বজুড়ে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশের অবস্থা ততটা খারাপ না। তবে এ মূহূর্তে ‘আয় বুঝে ব্যয় করার সংস্কৃতি জোরদার করতে হবে’।

২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা মহামারি আকার ধারণ করলে দেশে দেশে আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন, বিপণন, যোগাযোগ সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। থমকে যায় বৈশ্বিক অবস্থা। করোনার ঝুঁকি কমে আসার প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। চাহিদা বাড়ে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। জ্বালানি ও কাঁচামাল শতভাগ বিদেশনির্ভর হওয়া, খাদ্যের বড় একটি অংশ আমদানি করার কারণে বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়। চাপে পড়ে বৈদেশিক রিজার্ভ। করোনাকালে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়া ও আমদানি বন্ধ থাকার কারণে রিজার্ভ বেড়ে যায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু করোনা পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানিতে চাপ পড়ে। বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়। এ অবস্থায় সতর্ক না হলে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার মতো নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার পথে যেতে পারে বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তবে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার মতো এত খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ জন্য সতর্কতা অবলম্বন জরুরি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ দেখে মনে হচ্ছে সরকার ভেবেচিন্তে এগুচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, শ্রীলংকা বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সংকটে পড়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো চড়া সুদে বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণ ও প্রকল্প শেষের সঙ্গে সঙ্গে ঋণ ফেরত দেওয়া শুরু করা; করোনাকালে দেশটির অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি পর্যটনশিল্পে ধস নামা; করোনা ঝুঁকি-হ্রাস পরবর্তী বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ডলারের বিপরীতে দেশটির স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়া ও রিজার্ভ বিক্রি করে কৃত্রিমভাবে মুদ্রার মান ধরে রাখার চেষ্টার মধ্য দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শেষ করে দেওয়া অন্যতম কারণে। রিজার্ভ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ডলার বিক্রি করে স্থানীয় মুদ্রার মান ধরে রাখার সক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রার বড় ধরনের পতন ঘটে। সংকট তৈরি হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিকে আরো নাজুক করে তোলে।

জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এত খারাপ নয়। শ্রীলংকাকে ডলার ধার না দেওয়া ও কিছু কিছু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে আসার উদ্যোগ দেখে মনে হয় সরকার সতর্ক হয়েছে। আগামীতেও এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের মাইক্রো অর্থনীতি শক্তিশালী। দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহ শক্তিশালী হওয়ায় শ্রীলংকার মতো অবস্থা হবে না।

শ্রীলংকার সঙ্গে তুলনা করার পক্ষপাতি নন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে আমি প্যানিক ছড়ানোর পক্ষে নই। শ্রীলংকার কাছ থেকে শিক্ষা নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিবেচনা করে সরকার চলতি অর্থবছরের রিভাইজ বাজেটে এডিপি কমিয়ে আনা হয়েছে। খাদ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ চাঁদামুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে পণ্যমূল্য নাগালের মধ্যে থাকে।

দেশে যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এগুলো দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, যেসব প্রকল্প ধারণা পর্যায়ে আছে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই। গত কিছুদিন ডলার বিক্রি করে টাকার মান ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। এর ফলে বেশ কিছু ডলার বাইরে চলে গেছে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিও উচ্চ থাকবে। এ অবস্থায় ডলার বিক্রি করে টাকার মান ধরে না রেখে টাকার মান বাজারের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। যাতে প্রয়োজনে রিজার্ভ কাজে লাগাতে পারে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভর্তুকি বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে।