logo
আপডেট : ৮ এপ্রিল, ২০২২ ১২:০২
নববর্ষের ডাক শোনা যায়
যোবায়ের আহমদ

নববর্ষের ডাক শোনা যায়

এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। ফাইল ছবি

বাঙালির কণ্ঠে ধ্বনিত হয় তার চেতনা, চরিত্র এবং আকাক্সক্ষার সারৎসার। অগণন ঝড়-ঝাপটার ধ্বজভঙ্গে চারদিকে বাঙালির মৌল প্রেরণার আওয়াজ যেন শোনা যায়। আসছে ১৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে বাঙালির সর্বজনীন প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ। করোনার কারণে বন্ধ থাকায় দীর্ঘ দুই বছর পর ঢাবি ক্যাম্পাস মাতবে বর্ষবরণের উৎসবে।

এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। তার জোরেশোরে চলছে প্রস্তুতি। বুধবার চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেল, প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। জয়নুল গ্যালারির মুখে দেখা গেল ছবি আঁকছে একদল শিক্ষার্থী। জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম আঁকছেন তারা।

গ্যালারির ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বাংলার লোকজ আবহের আবেদনময়ী বাঘ-সিংহ-হাতি ও পেঁচাসহ নানা মুখোশে রঙ করতে ব্যস্ত আরেক দল শিক্ষার্থী। পাশেই আরেক দল শিক্ষার্থী ব্যস্ত সরাচিত্র নিয়ে। মাটির সরায় নানা রঙে কেউ ফুটিয়ে তুলছেন মাছ-ময়ূর-পাখির মুখ, কেউবা আঁকছেন ফুল-লতাপাতাসহ নানা মোটিভ।

মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ছবি- ভোরের আকাশ

 

এদিকে রোববার এক সভায় বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা যাবে না।

ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে।

নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ।

সভায় নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে সভায় প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ২৭-সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এবারো শোভাযাত্রা সকাল ৯টাতেই শুরু হবে। তবে শোভাযাত্রা শুরুর স্থানটি পরিবর্তন হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে যেহেতু চারুকলার সামনের রাস্তা সংকুচিত হয়ে আছে, তাই টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি শুরু হবে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’। মহামারি করোনাকালে মলিনতা মুছে জীবনে ছন্দে আসুক নির্মলতা। মঙ্গলময় হয়ে উঠুক স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এমন আশা থেকে উৎসারিত হয়েছে এবারের প্রতিপাদ্য।