সওয়াল: অসুস্থতা বা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অপারগ হলে করণীয় কি?
জওয়াব: সাধারণ অসুস্থতায় যদি সুস্থ হয়ে রোজা কাযা আদায় করা সম্ভাবনা না থাকে তাহলে সুস্থ হওয়ার পর কাযা আদায় করবে। আর যদি এমন অসুস্থতা হয় যা সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো সম্ভাবনা না থাকে বা কম থাকে অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা পালনে স্পূর্ণ অক্ষম হন; তাহলে প্রতি রোজার জন্য এক ফিৎরা পরিমাণ ফিদইয়া দিতে হবে। ফিদইয়া হলো একজন লোকের এক দিনের খাবারের সমান। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। যাকাত ফিৎরা যাদের দেওয়া যায় ফিদইয়া তাদের দিতে হয়। ফিদইয়া এককালীন বা একসাথেও আদায় করা যায়। একজনের ফিদইয়া অনেককে দেওয়া যায় আবার অনেকের ফিদইয়া একজনকেও দেওয়া যায়। অনুরূপ একদিনের ফিদইয়া একাধিক জনকে দেওয়া যায়, একাধিক দিনের ফিদইয়া একজনকে দেওয়া যায়। যাকে ফিদইয়া দেওয়া হবে তার রোজাদার হওয়া জরুরি নয়। যেমন: নাবালেগ মিসকীন, অসহায় অসুস্থ বা অতিবৃদ্ধ, যারা নিজেই রোজা পালনে অক্ষম। তাদেরও যাকাত ফিৎরা ও সদকার মতো ফিদইয়া প্রদান করা যাবে। ফিদইয়া প্রদানের পর সুস্থ হলে এবং রোজা রাখতে সক্ষম হলে পুনরায় রোজা কাযা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া রশীদিয়া)।
সওয়াল: রোজা অবস্থায় চোখে নাকে ও কানে ড্রপ দেওয়া যাবে কি না?
জওয়াব: রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় প্রয়োজনে চোখে নাকে ও কানে ড্রপ দেওয়া যায়। কারণ এটি পানাহারের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এর দ্বারা পানাহারের উদ্দেশ্যও সাধিত হয় না। সর্বোপরি এই ওষুধ সরাসরি পাকস্থলি বা মস্তিষ্কেও যায় না। যদিও কখনো কখনো নাকে বা চোখে ড্রপ দিলে মুখে উহার স্বাদ অনুভ‚ত হয়; তবুও এটি অতিস্বল্প মাত্রায় হওয়ার কারণে ধর্তব্যের আওতায় পড়ে না। যেমন: অজু করার সময় কুলি করলে মুখের ভেতরে পানি লাগে, তাতে কিন্তু রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। গোসল করার সময় শরীরের লোমকূপসমূহ দিয়ে যে অতি অল্প পরিমাণে পানি প্রবেশ করে তাতে যেমন রোজার ক্ষতি হয় না। অনুরূপভাবে শরীরের যে কোনো জায়গায় ক্ষতে বা ব্যথায় ক্রিম বা পাউডার ওষুধ লাগালেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না; যদিও তা রক্তের সাথে মিশে যায়। (মাজমাউল ফাতাওয়া)।
সওয়াল: রোজা অবস্থায় তেল সুরমা ও সুগন্ধি ব্যবহার করার হুকুম কি?
জওয়াব: রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় প্রয়োজনে তেল সুরমা ও সুগন্ধি ব্যবহারা করা যায়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। মাথায় চোখে মুখে কানে নাকে বা শরীরের যেকোনো জায়গায় তেল ব্যবহারের একই বিধান। তবে রোজায় বা রমজানের বাইরে পুরুষগণ রাতের বেলায় শোয়ার আগে সুরমা ব্যবহার করা সুন্নাত; দিনের বেলায় সুরমা ব্যবহার করা পুরুষের জন্য সবসময়ই মাকরূহ। মহিলাগণ দিনে বা রাতে সবসময় সুরমা ব্যবহার করতে পারবেন। পুরুষগণ ঘরে বাইরে সর্বাবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন; কিন্তু মহিলাগণ প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে তখন সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। এতে পরপুরুষের মনঃযোগ আকৃষ্ট হতে পারে। হাদিস শরিফে এসেছে: পুরুষের জন্য সুগন্ধি, মেয়েদের সাজ রং। (আবু দাঊদ শরিফ)। তাই রমজানে রোজার পাশাপাশি এসব বিষয়ও লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়। (ফাতাওয়ায়ে লাক্ষ্ণৌভী)।
লেখক: বাংলাদেশ ইসলামিক স্কলার্স ফোরামের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব এবং আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজমের সহকারী অধ্যাপক