logo
আপডেট : ৯ এপ্রিল, ২০২২ ১০:০৯
মাত্রাতিরিক্ত লবণে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি
আরিফ সাওন

মাত্রাতিরিক্ত লবণে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

প্রতীকী ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী একজন মানুষে দিনে ৫ গ্রাম, অর্থাৎ এক চা-চামচ লবণ খেতে পাবরেন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাচ্ছেন।

আর এ মাত্রাতিরিক্তি লবণ খাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি। উচ্চরক্তচাপ নীরব ঘাতক। এর কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস স্টাডি (জিবিডি) ২০১৯-এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চরক্তচাপ। বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মারা যায়, যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চরক্তচাপ।

ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখের মানুষ অসংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন, যার প্রায় অর্ধেক হৃদরোগজনিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে আসবে। উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে এলে কমবে মৃত্যুঝুঁকিও।

তারা বলছেন, ঘরের খাবার এবং বাইরের খাবার দুভাবেই শরীরে ঢুকছে লবণ। ঘরে মাত্রা থাকলেও না জেনে বাইরের খাবার থেকে অনেক সময় শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ।

তাই বাইরের খাবারে লবণের মাত্রা নির্ধারণ করে রেজুলেশন তৈরির তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটল অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভ‚ইয়া বলেন, অতিরিক্তি লবণ বন্ধ করতে পারলে ৫০ শতাংশের উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে যেত।

একজন মানুষের প্রতিদিন ৫ গ্রাম লবণ প্রয়োজন অর্থাৎ এক চা-চামচ। কিন্তু তার বেশি তারা খাচ্ছেন। জেনে খাচ্ছেন আবার না জেনেও খাচ্ছেন। ঘরে তিনির জেনে খাচ্ছেন। আর ঘরে বাইরে যে খাবার খাচ্ছেন, তাতে কী পরিমাণ লবণ আছে, তা না জেনেই খাচ্ছেন। যেমন চিপসে ১০ গ্রাম লবণ থাকে।

তা অনেকই জানেন না। মানুষ সিঙ্গাড়া-সামুচা বা হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন খাবার খােেচ্ছন, তাতে কী পরিমাণ লবণ রয়েছে, তা তিনি না জেনেই খাচ্ছেন।

ফলে শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ। ঘরে লবণ খাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য অনুযায়ী তরকারিতে ঠিক সেই কয় চামচ লবণ দেওয়া।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের একটা গবেষণা ছিল, ২০১৫ সালে মিরপুর বাউনিয়া বস্তিতে। আমরা তখন একজনের ৭.৮ গ্রাম লবণ খাওয়ার প্রমাণ পেয়েছি।

যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে ৫ গ্রাম লবণ খাওয়ার জন্য। এরপর বছর দুয়েক আগে আরেকটা স্টাডি করলাম। তখন দেখতে চেয়েছিলাম, কারা বেশি লবণ খায়।

যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে, তারা বেশি খায়, নাকি যাদের নেই তারা বেশি খায়। তখন দেখলাম, যাদের উচ্চরক্তচাপ নেই, তারা খায় ৯.২ গ্রাম। আর যাদের আছে, তারা খায় ৮.৪ গ্রাম।

তিনি বলেন, দেখলাম, দুই রকমের লবণ আছে। একটা মোটা দানা একটা মিহি দানা। মোটা দানার দাম অর্ধেক। বস্তিতে দেখলাম ওরা রান্না করে মোটা দানা দিয়ে। আর টেবিল সল্ট হিসিবে দেয় মিহি দানা।

বাইরে কোনো খাবারে কী পরিমাণ লবণ থাকে, তা নিশ্চিত নয়। কোন খাবারে কতটুকু লবণ দিতে হবে, তা নিয়েও নেই কোনো গাইডলাইন।

এ প্রসঙ্গে ডা. খালেকুজ্জামান বলেন, কোনো লিমিট নেই। কতটুকু রাখা যাবে। একটা গাইডলাইন যদি থাকত ধরেন ১০০ গ্রাম ফ্রেন্স ফ্রাইতে অতটুকু লবণ দেওয়া যেত।

তাহলে কি হতো আমরা বলতে পারতাম এতটুকু দেন। কিন্তু এরকম গাইডলাইন তো নেই। গাইডলাইন না থাকায় তারা যেমন খুশি তেমন দেয়। কী করা যায় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রেজুলেশন তৈরির জন্য আবেদন করা যায়।

আরেকটা হচ্ছে কনজ্যুমারদের অ্যাওয়ার করা যায়, যে ১০০ গ্রাম ফ্রেন্স ফ্রাই খেলে সারা দিনে আপনার যে পরিমাণ লবণ খাওয়ার কথা আপনি চারভাগের একভাগ খেয়ে ফেলছেন। এবার বোঝেন আচারে খাচ্ছেন, তরকারিতে খাচ্ছেন এটা হচ্ছে একটা।

আরেকটা হচ্ছে হাইপারটেনশনের জন্য কাকে অ্যাপ্রোচ করবেন। দুটি দায় একটি হচ্ছে আমার আরেকটি হচ্ছে সরকারের। সরকার করে কী? সবসময় আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

স্কুল গেটের বাইরে বিক্রি করবেন ফার্স্টফুড আর বলবেন শিশুরা যেন এগুলো না খায়। তা কী হয়! পেশার মাপার যন্ত্র থেকে মেপেই বোঝা যাবে আপনার উচ্চরক্তচাপ কিনা?

নরমাল বা স্বাভাবিক ব্লাডপ্রেশার হচ্ছে ১২০-৮০। প্রি-হাইপারটেনশন- নিচে ৮০ থেকে ৮৯, ওপরে ১২০ থেকে ১৩৯ পর্যন্ত।

হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ নিচে ৯০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত এবং ওপরে ব্লাডপ্রেশার ১৪০ থেকে ১৫৯ পর্যন্ত। হাইপারটেনশন-২- নিচে ১০০ থেকে ১০৯ পর্যন্ত এবং ওপরে ১৬০ থেকে ১৭৯ পর্যন্ত।