আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপাতত কোনো ভাবনা নেই জামায়াতে ইসলামীর। নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে কোনদিকে অবস্থান নেবে, অর্থাৎ ২০ দলীয় জোটে থাকবে নাকি নতুন কোনো মেরুকরণে যুক্ত হবে, সেটিও অস্পষ্ট। দলটির নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত রয়েছেন সামাজিক ও অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক কাজে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ লোকবল তৈরিতে মনোযাগ দিয়েছে জামায়াত ইসলামী। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের এখনো অনেকদিন বাকি। তাছাড়া নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হবে, সেটিও পরিষ্কার নয়।
তাই এখনই নির্বাচনী চিন্তা না করে দলের পক্ষে ইতিবাচক নানামুখী কার্যক্রমের পাশাপশি সামাজিক কর্মকাণ্ড জোর দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করে আওয়ামী লীগ।
ওই বিচারে ইতোমধ্যে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ ৯ নেতার বিরুদ্ধে রায় কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং দলটির ‘খাজাঞ্চি’ হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।
আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। কারাগারে সাজা ভোগ করা অবস্থায় মারা গেছেন দলটির সাবেক আমির গোলাম আযম, এ কে এম ইউসুফ ও সাবেক নায়েবে আমির আবদুস সুবহান।
এখনো জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১৩ সালের আগস্টে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে রায় প্রদান করেন।
এ রায়ের পর থেকে জামায়াত তাদের নিজস্ব প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ মার্কা নিয়ে ভোট করার ক্ষমতাও হারিয়েছে। সব মিলিয়ে জামায়াত এখন বেশ ‘ক্রাইসিসে’। আগামী নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ এখন সরগরম হতে শুরু করেছে।
জামায়াতের ব্যাপারে কৌশলী বিএনপি এখন ‘বৃহৎ ঐক্য’ গড়তে তৎপর। দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ের পর বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
নিবন্ধন হারানো জামায়াত আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকছে নাকি সম্ভব্য নতুন মেরুকরণে যুক্ত হচ্ছে বা স্বতন্ত্র প্রতীক ভোট করবে।
এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে বা আগামী নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের ভাবনা জানতে অনুসন্ধান চালায় দৈনিক ভোরের আকাশ।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর জামায়াত মাঠের রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় নেই। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে দলটি। বিশেষ করে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি পরিহার করে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে লোকবল তৈরির মিশন শুরু করে জামায়াত।
২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত জ্বালাও-পোড়াও করা জামায়াতের তৃণমূল এখন ব্যস্ত ‘দাওয়াতি’ কর্মকাণ্ডে। জামায়াত সম্পর্কে ইতিবাচক অবস্থান তৈরি করতে তারা এখন পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত কাজ শুরু করেছে।
মানুষের সহানুভ‚তি পেতে; বিশেষ করে মুসলিমদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করছে দলটি। মানুষকে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে বোঝানোর আড়ালে তারা দলীয় কাজটিও সেরে নিচ্ছে কৌশলে।
এ ছাড়া অমুসলিমদেরও নানা সহযোগিতা করা হচ্ছে জামায়াতের পক্ষ থেকে। করোনাকালীন পুরো সময়ে অমুসলিমদেরও সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছে জামায়াত।
ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন নিজ দলের কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
চলমান রমজানেও ইফতার পার্টির অন্তরালে দলীয় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে জামায়াত। তবে নির্বাচনী কোনো কর্মকাÐ নেই জামায়াতে ইসলামীতে। দলটির একাধিক তৃণমূল নেতারা সঙ্গে কথা বলে যার সত্যতা পাওয়া গেছে।
কথা হয় যশোর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও জেলা কমিটির শিক্ষা, সহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, দল এখন ব্যস্ত রয়েছে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে।
শুক্রবারও যশোরে সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা ছিল বলে জানান তিনি। বলেন, অসহায় মানুষের পাশে থাকার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করোনালীন পুরো সময়ে সব ধর্মের মানুষের পাশে ছিলেন তারা। এখনো আছেন।
রাজধানীর রমনা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি আতিকুর রহমান বলেন, দলীয় অভ্যন্তরীণ কর্মকাÐ নিয়ে আমরা এখন ব্যস্ত রয়েছি। বিশেষ করে দলীয় কর্মী, সমর্থক বাড়ানোসহ নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে জামায়াত।
এ ছাড়া দলের কেন্দ্র থেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকার জন্য বলা হয়েছে। রমজানে ইফতার পার্টি থেকে শুরু করে দাওয়াতি কর্মকাণ্ডের পরিধিও বাড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্র থেকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি বলেও জানান তিনি। তৃণমূল নেতাদের মতো কেন্দ্রীয় নেতারাও একই কথা বলছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুসংগঠিত সংগঠন।
জামায়াত শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করে না। মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে কাজ করছে। আগামী নির্বাচন কেমন হবে? অতীতের কয়েকটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি।
আগামী নির্বাচনেও মানুষ ভোট দিতে পারবে কিনা- এমন নানা প্রশ্ন রয়েছে। আর নির্বাচনের এখনো অনেক দিন বাকি। তাই এটি নিয়ে এখনো ওইভাবে চিন্তা করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা ২০ দলে আছি। সঠিক সময়ে দল নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।