logo
আপডেট : ৯ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৫৭
মোবাইল ছিনতাই চক্রের নয়া কৌশল
ইদ্রিস আলম

মোবাইল ছিনতাই চক্রের নয়া কৌশল

প্রতীকী ছবি

অনলাইনে দামি দামি ব্র্যান্ডের মুঠোফোনের গ্রাহক সেজে অর্ডার করতেন তারা। এরপর ডেলিভারিম্যান আসলে তার থেকে মোবাইল ছিনতাই করে নিতেন এই চক্রের সদস্যরা।

এর পর লাখ টাকার ফোন বিক্রি করত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায়। এমন নানা কৌশলে রাজধানীজুড়ে বেড়েই চলেছে ছিনতাই চক্রের অপরাধ।

ফুডপান্ডার ডেলিভারিম্যান থেকে ছিনতাইকারী চক্রে নাম লিখিয়েছেন শাকিল। কীভাবে এই চক্রে জড়ালেন তা জানান তিনি। শাকিল বলেন, তিনি ফুডপান্ডার কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।

চক্রের কয়েকজন সদস্য ফুডপান্ডায় খাবার অর্ডার দিলে তা দিতে গেলে শাকিলের মুঠোফোন কেড়ে নেন। এরপর শাকিল নিজে ওই চক্রে জড়িয়ে পড়েন।
রপ্ত করেছেন চুরির বড় কৌশলও।

শাকিল জানান, ইউটিউবে ভিডিও দেখে শাকিল আইফোনের শনাক্তকারী ডিভাইস বদলানোর কৌশল শেখেন। অনলাইনে মুঠোফোন বিক্রির জন্য শাকিল নাম-পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন।

ডিবি বলছে, রাজধানীজুড়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ছিনতাই করেন চক্রের সদস্যরা। ঢাকায় অন্তত ২০টি মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা দিনে ৮ থেকে ১০টি মুঠোফোন ছিনতাই করে।

রাজধানীতে স্থানভেদে এই চক্রের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। যাদের সদস্য রয়েছে প্রায় শতাধিক। আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, বনানী, গুলশান, ভাটারা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে তিনটি ছিনতাইকারী চক্র।

রামপুরা, হাতিরলঝিল, মগবাজার ও মালিবাগ এলাকায় তিন থেকে চারটি চক্র রয়েছে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও নিউমার্কেট এলাকায় সক্রিয় রয়েছে অন্তত পাঁচটি চক্র।

গুলিস্তান, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় আরো চার থেকে পাঁচটি চক্র মুঠোফোন ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এই চক্র প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টি মুঠোফোন চুরি করে থাকে। কখনো হাত থেকে, আবার কখনো বাসের জানালা দিয়ে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোন। সুযোগ বুঝে বাসা থেকেও চুরি হয়ে যাচ্ছে মুঠোফোন।

পুলিশ বলছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। অনলাইনে ও ফেসবুকের মাধ্যমে মুঠোফোন কেনাবেচার বিভিন্ন পেজে ঘুরে বেড়াতেন এই চক্রের কয়েকজন সদস্য।

এরপর ছিনতাই করা এসব আইফোনের যন্ত্রাংশ খুলে শনাক্তকারী ডিভাইস পাল্টে বিক্রয় ডটকমের মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সেগুলো বিক্রি করতেন তারা।

সম্প্রতি, কয়েকটি অভিযানে এমনই কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ। এভাবেই রাজধানীতে মাসে কোটি টাকার মুঠোফোন ছিনতাই করছে চক্রের সদস্যরা।

ছিনতাইয়ের পর মুঠোফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি ও করছে হরহামেশেই।

বগুড়ায় এমনই একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশ। তারা হলো নূর কবীর ওরফে শাকিল (২৪), মোহাম্মদ স্বাধীন (২০) ও সাদী আব্বাস (২০)। তাদের সবার বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলায়।

এ বিষয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ফুডপান্ডার ডেলিভারি ব্যাগসহ ছিনতাই করা তিনটি আইফোন, ডিভাইস বদল করা ৩৩টি আইফোন, বিভিন্ন ফোনের ৬০টি যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়। ওই চক্রের মূল হোতা শাকিল।
সম্প্রতি চুরি ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত মার্চ মাসে মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্রের অন্তত ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক মুঠোফোন। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গাবতলী, মিরপুর, শ্যামলী, আদাবর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকায় মুঠোফোন ছিনতাই করে চারটি চক্র। এ চক্রগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন শহিদ। আর এ চক্রের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের মুঠোফোন কিনে বিক্রি করেন টিপু।

গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানায়, ছিনতাই করা কম দামি মুঠোফোনগুলো সরাসরি গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটে বিক্রি করা হয়।

দামি মুঠোফোনগুলো কিনে নেন তিনজন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে দুজনের নাম টিপু ও শহিদ। এ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আরেকজনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

ডিবির একটি সূত্র বলছে, সাভারে বাস করেন টিপু নামের একজন। ছিনতাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে গিয়ে মুঠোফোনের একটি ছবি টিপুর কাছে পাঠান ছিনতাইকারী।

ঢাকায় এসে সেই মুঠোফোন কিনে সাভারে যেতেন টিপু। সেখানে দুটি মোবাইল সেট সার্ভিসিংয়ের দোকানে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় আইএমইআই পরিবর্তন করে কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় মুঠোফোন।

৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মুঠোফোন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনে নেন টিপু। পরে সেগুলো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

ডিবির তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে খোকন নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জানতে পারেন, তার জামিন হয়েছে।

গত মার্চ মাসে আবার ছিনতাই করতে গিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন খোকন।

র‌্যাব-৩ এর মেজর জুলকার নায়েন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। জাহাঙ্গীর, সাজু মণ্ডল ওরফে সাহাজুল, মো. জাকির হোসেন, মো. রাসেল ওরফে মিঠু ও মোক্তার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী এবং কাঁচপুর ব্রিজ, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাই করে আসছে।