পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মূলতবি শেষে নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পর আবার শুরু হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় অধিবেশন আবারো শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মুলতবির পর স্পিকারের কক্ষে সরকারি ও বিরোধীদের বৈঠক চলে। এরপর দুপুর আড়াইটায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায়) অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন স্পিকার আসাদ কায়সার। আদালতের নির্দেশে এ অধিবেশনেই নির্ধারণ করা হবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য। তবে তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেননি। সরকারি দলের খুব বেশি সদস্যও পরিষদে যোগ দিতে আসেননি। তবে বিরোধীরা দল বেঁধে অধিবেশনে উপস্থিত হয়েছেন। প্রধান বিরোধীদল মুসলিম লীগ (নওয়াজ) এর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিলওয়াল ভুট্টো-জারদারিকে অধিবেশনে উপস্থিত আছেন।
জোট সঙ্গীরা পক্ষ ত্যাগ করায় তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ যে অনাস্থা ভোটে ধরাশায়ী হবে সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশটির রাজনীতিবিদরা। খবর ডনের।
পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত গত বৃহস্পতিবার রাতে ডেপুটি স্পিকারের দেওয়া রুলিংকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। আদালত রাষ্ট্রপতির নির্দেশে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ভেঙে দেওয়াকেও অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর জাতীয় পরিষদ আজ শনিবার (৯ এপ্রিল) বসার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে। এ বৈঠকে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিরও নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ওই রায় দেয়।
ওই রায় পাওয়ার পর দেশটিতে বিরোধীদলের রাজনীতিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। আর ক্ষমতাসীন দল কোণঠাসা হতে থাকে। আজ পাকিস্তান সময় সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন যখন শুরু হয় তখনও ট্রেজারি বেঞ্চে শাসক দলের এমপিদের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলে।
সকালের অধিবেশনে কোরান তেলাওয়াত, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং একজন নারী এমপির মায়ের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পরই মূলতবি ঘোষণা করা হয়। এরপর দুপুরে অধিবেশন আবারো শুরু হয়েছে। মধ্যবর্তী সময়ে বিরোধীদলীয় নেতার কক্ষে বিরোধীদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।। সেখানে অনাস্থা ভোট নিয়ে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং বিরোধীরা জয়ী হলে যদি সরকার গঠনের প্রস্তাব আসে তাহলে কার নাম প্রস্তাব করা হবে সে বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয় বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরিফ সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে সকালে অধিবেশন মূলতবি হওয়ার পর সরকারি ও বিরোধীদলের মধ্যে জাতীয় পরিষদের স্পিকারের কক্ষে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে উভয়পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান স্পিকার। ওই বৈঠকে সরকারি দলের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি ও পিটিআই নেতা আমির ডোগার এবং বিরোধী পক্ষে বিলওয়াল ভুট্টো-জারদারি, রানা সানাউল্লাহ, আয়াজ সাদিক, নাভিদ কামার ও মৌলানা আসাদ উপস্থিত ছিলেন।
আজকের আলোচনার চার নম্বর সূচিতে রয়েছে অনাস্থা ভোট। সে বিষয়ে এবারের অধিবেশনে আলোচনা শেষে ভোট হবে। অধিবেশন শুরু হতেই সরকারদলীয় এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি ফ্লোর নিয়ে হতাশ কণ্ঠে বলেন, আইনপ্রণেতারা বস্তুগত লাভের কারণে তাদের আনুগত্যকে বিসর্জন দিয়েছেন, এরচেয়ে পরিহাসের আর কিছুই নেই। অধিবেশনে দেওয়া দীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি মূলত বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং কিছু
এর আগে, সকালে অধিবেশনে ফ্লোর নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা শেহবাজ শরিফ আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে, আদালত যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে স্পিকারকে অনুরোধ জানান। তিনি দাবি করেন, সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্ত জাতির ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করেছে।
ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ দেশটির বিরোধীদলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব আনে। একইদিনে তার জোট সঙ্গীরা পক্ষ ত্যাগ করে। এ বিষয়ে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাচাইয়ের মুখোমুখি হন ইমরান খান। তবে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টিকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ এবং দেশের ‘সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন। গত ৩ এপ্রিল দেশটির জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সরকারি দলের বক্তব্যকে সমর্থন করে ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি দেশটির সংবিধানের ৫ নম্বর ধারায় বর্ণিত দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল থাকার বিষয়টি সামনে টেনে এনে রুলিং দেন এবং ইমরান খান সরকারের ওপর আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেন। এর পরপরই প্রেসিডেন্টের কাছে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
সাংবিধানক বাধ্যবাধকতায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এরপর নতুন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণে সরকার ও বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এসময় ঘোলাটে হয়ে ওঠে। প্রধান বিচারপতি নিজেই সুপ্রিম কোর্টে সুয়োমোটো রুল জারি করেন। অন্যদিকে, বিরোধীরা অভিযোগ আনে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডেপুটি স্পিকার অসাংবিধানিকভাবে অনাস্থা ভোট বাতিল করেছেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তারাও আদালতের দ্বারস্থ হন।
সর্বোচ্চ আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে এবং রুলের ওপর শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে ওই রায় দেন।
/টিএন/