logo
আপডেট : ৯ এপ্রিল, ২০২২ ১৮:০১
পা উৎসর্গ করব, তবুও মেডিকেলের আধুনিকায়ন দেখে যেতে চাই: অনশনে ঢাবি ছাত্র
ঢাবি প্রতিনিধি

পা উৎসর্গ করব, তবুও মেডিকেলের আধুনিকায়ন দেখে যেতে চাই: অনশনে ঢাবি ছাত্র

ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়ে গত পাঁচ দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে অবস্থান করছেন ঢাবির শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। কিন্তু সেখানে সেবার জন্য কোনো চিকিৎসক, ওয়ার্ডবয় পাননি বরং নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি। তাই নিজের পা উৎসর্গ করে হলেও মেডিকেলের আধুনিকায়ন চেয়ে ৬ দফা দাবি আদায়ে মেডিকেলেই অনশনে বসেছেন তিনি।

ঢাবির এই শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে খাবার এবং ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। ১২ ঘন্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই দাবি পূরণের নিশ্চয়তা এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু না করলে আমরণ অনশনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

শনিবার (৯ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, গতকাল আমার পোস্টকৃত ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখে আমার হল প্রোভোস্ট স্যার, আমার বড় ভাইয়েরা, আমার পরিবারের সবাই আমাকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাচ্ছেন। তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। কিন্ত আজ যদি আমি এখান থেকে চলে যাই তাহলে এই মেডিকেল সেন্টারের পরিবর্তন আর কখনোই আসবে না। আধুনিকায়ন আর কখনোই হবে না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি প্রয়োজনে একটি পা স্যাক্রিফাইস করার জন্য প্রস্তত। তবুও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন না দেখে যাবো না।

তিনি পোস্টে আরো বলেন, আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষেও আজ বঙ্গবন্ধুর আইন বিভাগের সামনে এত বড় একটা অব্যবস্থাপনা...। এটা কি বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা নয়?

তিনি বলেন, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী-চিকিৎসা সবারই দরকার। আগামী ১২ ঘন্টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই দাবি পূরণের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা, আশ্বাস এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু না করলে আমার এই অনশন আমরণ অনশনে রূপান্তরিত হবে। আমি আজকে ওষুধ, খাবার খাওয়া বন্ধ করলাম।

তার ৬ দফা দাবি হলো:

১. মেডিকেল সেন্টারের এন্ট্রি পয়েন্টে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করতে হবে।

২. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফট, র‍্যাম্প, হুইল চেয়ার ও অন্যান্য এক্সেসোরিজ প্রদান করতে হবে।

৩. মেয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্বর্তীকালীন শারীরিক সমস্যার সকল চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান করতে হবে।

৪. অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট বা মেশিন স্থাপন করতে হবে।

৫. অতিদ্রুত মেডিকেল সেন্টার কর্তৃক নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রদান ও ক্যান্টিন স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।

৬. অতিদ্রুত হাই-কমোড, তথা হাইলি ডেকোরেটেড স্যানিটেশন সিস্টেমে টয়লেট, বাথরুম তৈরি করতে হবে।

এদিকে, রনির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন অনেকে। ইসরাত সুলতানা নিশি নামে একজন লিখেছেন, ‘তোর এই লড়াইয়ে পাশে আছি। এ বছর জানুয়ারিতে কোভিড টেস্ট করতে গিয়ে আমিও ভোগান্তির শিকার হয়েছি। করোনার সব লক্ষণ দেখেও উনারা আমাকে প্রভোস্টের সাইন নিতে যেতে বলেছিলেন কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে টেস্টের কীট ছিল না।’

জাহিদ হাসান লিখেছেন, ‘ব্যাপারটা কতদূর আগাবে জানি না, কিন্তু এটা একটা খুবই গুড ইনিশিয়েটিভ এই জাদুঘরটারে মনুষ্য ব্যবহার উপযোগী করার জন্য। পাশে আছি।’

শুক্রবার রাতে চিকিৎসা না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি ভিডিওবার্তা দেন রনি। ভিডিওবার্তায় রনি বলেন, এখানে না আছে মশা নিধনের কোনো ব্যবস্থা, না আছে মশারি। এখানে সারারাত ধরে আপনি কাতরাবেন বা কাঁদবেন, এতোগুলা ওয়ার্ড আছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় একটা ওয়ার্ডবয়ও এখানে নেই। ডাক্তার তো নেই, একটা ওয়ার্ডবয়ও নেই যারা সামান্যতম খোঁজখবর নেবে, এখানে সবাই নবাব।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. হাফেজা জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, দাবিগুলো পূরণ হলে আমাদের জন্যও ভালো হয়। কিন্তু আমাদের তো সেই সক্ষমতা নেই। আমাদের ডাক্তাররাই তিনজন এক রুমে বসে। এক টেবিলে ২ ডাক্তার বসে। চিকিৎসা দেবার জায়গা পাই না। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা। আমি তাকে লিখিত আকারে দিতে বলেছি তাহলে আমি ঊর্ধতন পর্যায়ে জানাব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধলক্ষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসাকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টার। কিন্তু সেখানে প্যারাসিটামল ছাড়া কার্যত কোনো চিকিৎসা সেবা নেই বলে সংশ্লিষ্ট সকলের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে।