পবিত্র মাহে রমজান মাসের অষ্টম দিনে এই দোয়া পড়তে হয়- উচ্চারণ : আল্লাহুম্মার যুক্বনি ফিহি রাহমাতাল আয়তামি; ওয়া ইত্বআ’মাত ত্বাআ’মি; ওয়া ইফশাআস সালামি; ওয়া সুহবাতাল কিরামি; বিত্বাওলিকা ইয়া মালজাআল আমিলিন। অর্থ : হে আল্লাহ ! আপনার উদারতার উসিলায় এ দিনে আমাকে এতিমদের প্রতি দয়া করার, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান করার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও সৎ ব্যক্তিদের সাহায্য লাভ করার তৌফিক দিন। হে আকাক্সক্ষাকারীদের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল।
রোজার সার্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ বিভিন্ন পাপাচার থেকে দূরে থেকে সৎ কাজের প্রতি ধাবিত হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত, রোজার এ মহান শিক্ষাকে কাজে লাগানো। তাই রোজার প্রতি সবারই যত্নবান হওয়া অপরিহার্য।
রমজান হলো মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের আহ্বান। তাই একজন মুমিনের জন্য আবশ্যক কর্তব্য হলো, আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পবিত্র রমজানে সকল প্রকার গুনার কাজ থেকে বিরত থেকে এবং ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করা। রমজান মাসের প্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ইখলাছপূর্ণ রোজা পালন করা। বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা ঈমান, সওয়াব, ইখলাছের উদ্দেশ্যে রাখবে, তার পূর্ববর্তী সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে।
মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা ঈমান, ইখলাছের সঙ্গে রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তার পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
হাদিস শরিফে বর্ণিত, হজরত জিবরাইল (আ.) রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাকে কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করে শোনাতেন (বুখারি)।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের সদকা সবচেয়ে উত্তম সদকা’ (তিরমিজি)। তিনি (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সেও রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। রোজাদারের সওয়াব মোটেও কমানো হবে না।’
ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন। রুজি হারাম হলে আল্লাহর দরবারে তার কোনো ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হয় না। রমজান মাসে এর গুরুত্ব বেড়ে যায় আরো বহুগুণ। রাসুল (সা.) রমজান মাসে হালাল রুজির প্রতি যত্নবান ব্যক্তির জন্য ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যার রমজান মাস নিরাপদে কাটল, তার পুরো বছরই নিরাপদে কাটল।’ (তিরমিজি)
মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে বান্দার দোয়া কবুল করা হয়। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও স্বীয় গুণাহ ক্ষমা করাতে পারল না তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। বুখারি শরিফে বর্ণিত, হুজুর (সা.) প্রত্যেক রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছরও বিশ দিন ইতেকাফ করেন।
হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে শবেকদর তালাশ কর।’ অপর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সঙ্গে শবেকদরের নফল আদায় করল তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
আমাদের করা গুনাহের কারণে রমজান মাসের বরকত এবং সওয়াব নষ্ট হয়। রমজানের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করার কারণে কখনো কখনো গুনাহের ভাগিদার হতে হয়। তাই রোজাদারের জন্য রমজান মাসে গুনাহ ত্যাগ করা আবশ্যক। প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন, কখনো যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও কাজ ছাড়ল না, আল্লাহর জন্য তার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই (বুখারি ও মুসলিম)।
আল্লাহ পুরো রমজান মাসে আমাদের এসব আমল সহি নিয়তে করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমরা পরিবার, সমাজ, দেশ তথা সারা বিশ্বের শান্তি কামনা করে বেশি বেশি দোয়া করব।
লেখক: উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। [email protected]