logo
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:৫৪
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে কে এই শাহবাজ শরীফ
অনলাইন ডেস্ক

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে কে এই শাহবাজ শরীফ

শাহবাজ শরিফ। ফাইল ছবি

চরম নাটকীয়তা শেষে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে গতকাল শনিবার মধ্যরাতের পর। আলোচিত এই অনাস্থা ভোটের আগেই পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ছেড়ে বেরিয়ে যান তেহরিক-ই-ইনসাফের সাংসদরা। ভবিষ্যৎ আঁচ করে অ্যাসেম্বলিতে যাননি খোদ ইমরান খান। এরপর অনাস্থা ভোটে তার বিরুদ্ধে পড়ে ১৭৪ ভোট।

এর মধ্য দিয়ে ইমরান খানের সরকারের পতন হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতা শেহবাজ শরিফকে অভিনন্দন জানান সদ্য স্পিকারের আসনে বসা আয়াজ সাদিক। ধারণা করা হচ্ছে, এই শাহবাজ শরিফই পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।

রোববার আনন্দজাবারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রথম থেকেই জল্পনা ছিল, ইমরান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই হবেন। তার পুরো নাম মিয়া মহম্মদ শাহবাজ শরিফ। অনাস্থা ভোটে ইমরানকে গদিচ্যুত করার পর শাহবাজকে কিছু বলার অনুরোধ করা হয়। অ্যাসেম্বলিতে গলা উঁচিয়েই শাহবাজ জানান, কোনো মতেই বদলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেননা তিনি। এই ফল পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছাতেই হয়েছে। পাকিস্তানে সুদিন ফিরতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা শাহবাজ শরিফ।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হওয়া এই শাহবাজ শরিফ কে? 

তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুসলিম লিগের জনপ্রিয় নেতা নওয়াজ শরিফের আপন ভাই। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। পাঞ্জাব প্রদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদের মুখ্যমন্ত্রীও তিনি। পাঞ্জাব প্রদেশে তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। দাদা নওয়াজ শরিফ দেশ ছাড়ার পরে পাকিস্তান মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন তিনি। তখন থেকেই ভাইঝি মরিয়াম শরিফকে নিয়ে দল সামলাচ্ছিলেন।

২০১৮ সালের ১৩ অগস্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য হন শাহবাজ শরিফ। তাই নিয়েই পাকিস্তানে জল্পনা এখন তুঙ্গে। আগামী ১২ এপ্রিল ফের বসবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন। সেই অধিবেশনেই পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হওয়ার কথা।

কূটনীতিবিদদের একাংশের দাবি, শাহবাজকে আগামী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাথায় রেখেই ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের দাবি তুলেছিলেন বিরোধীরা। ইমরান-পতনের পর আগামীকাল সোমবার সেই ঘোষণাই পাকাপাকিভাবে হওয়ার কথা।

পাকিস্তানের ইতিহাসে অনাস্থা ভোটে হারা প্রথম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর কোনো প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ পার করতে পারেননি, পারলেন না ইমরান খানও।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ৩৪২ আসন থাকায় সরকার গঠন কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার জন্য ১৭২ ভোটের প্রয়োজন হয়। অনাস্থার পক্ষে বিরোধীরা ১৭৪ ভোট দেওয়ায় ইমরান খানের পক্ষে পরিষদে আর প্রমাণের কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি।

তবে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) জানিয়েছে, গত ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকারের দেওয়া রুলিংয়ের ওপরে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে তারা আপিল করবে। শনিবার বিকালে এজন্য চেষ্টা করা হলে রমজানের কারণে অফিস আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আবেদন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় আদালত। পিটিআই নেতারা তখন জানান, তারা সোমবার এ বিষয়ে আপিল করবেন।

গত বৃহস্পতিবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক অভূতপূর্ব রায় দিয়ে প্রেসিডেন্টের ভেঙে দেওয়া জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল করে। সে রায় অনুযায়ী শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে কোরআন তেলাওয়াত, জাতীয় সংগীত বাজানো, শোক প্রস্তাবের পর চতুর্থ এজেন্ডা ছিল অনাস্তা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণ। তবে শোক প্রস্তাবের পর রীতি অনুযায়ী অধিবেশন মূলতবি করা হলে নাটকীয়তা শুরু ও দিনভর চলতেই থাকে।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অন্তত চারবার অধিবেশন মূলতবি করা হয় এবং প্রায় প্রতিবারই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে স্পিকার ও একটি সেশনে একজন প্যানেল সদস্য অধিবেশন শুরু করেন। তবে শত চেষ্টাতেও বিরোধীদের হটাতে পারেননি স্পিকার আসাদ কায়সার। রাত বেড়ে গেলেও তারা জাতীয় পরিষদে অবস্থান করে অনাস্থা ভোটের দাবি জানাতেই থাকেন।

ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ দেশটির বিরোধীদলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব আনে। একইদিনে তার জোট সঙ্গীরা পক্ষ ত্যাগ করে। এ বিষয়ে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাচাইয়ের মুখোমুখি হন ইমরান খান। তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পুরো বিষয়টিকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ এবং দেশের ‘সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন।